শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাশ্রয়ী হতে হবে সব ক্ষেত্রে 

আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ০৩:৩৯

চারদিকে হাহাকার, সংকট। দাবানল চোখ রাঙাচ্ছে। তীব্র দাবদাহে পুড়ছে বিশ্ব। ‘নাই’ ‘নাই’ শব্দ শোনা যাচ্ছে সর্বত্রই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে যেন! সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস, তেল এবং বিদ্যুতের সংকটে ভারী হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। জ্বালানি তেলের গুরুত্ব প্রতিটি দেশের জন্যই অপরিহার্য। অথচ আজকের বিশ্বে এর অভাবে নাভিশ্বাস উঠছে প্রতিটি দেশে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেড়েছে লোডশেডিং। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে প্রতিটি জ্বালানির দাম চড়া। কাজেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দেশে কয়েক দিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ব জুড়ে প্রভাব পড়েছে এই যুদ্ধের। প্রতিটি দেশই ভুগছে তেল এবং গ্যাস সংকটে। জ্বালানি খাতে বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার প্রভাবের কথা আমাদের সবারই জানা। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে রাশিয়ার ওপর কঠোরতম অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। দেশটি থেকে পণ্য আমদানি বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হয় রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেল-গ্যাসে—জ্বালানি তেলের এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ করে আসছে রাশিয়া।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে রাশিয়া। অথচ বিপদে আছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। দেশে দেশে জ্বালানি সংকটে উত্পাদনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে সংকট সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব লক্ষণীয়—দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। গ্যাস, বিদ্যুতের ঘাটতিতে রয়েছে দেশ। আরো উদ্বেগের ব্যাপার হলো, এই ঘাটতি শিগ্গিরই কাটছে না। মনে করা হচ্ছে, দেশের জ্বালানি সংকটের তীব্রতা কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হবে। এরই মধ্যে ডিজেল এবং গ্যাসের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো, লোডশেডিংসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। 

সরকার আশা করছে, সেপ্টেম্বরের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই সংকট আরো বাড়বে। সংকটের মুখে সরকার ডিজেলের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিচ্ছে। যদিও অকটেন-পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলের তুলনায় দেশে ডিজেলের চাহিদা বেশি— বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয়, যা অন্যান্য তেলের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে আমরা গ্যাস-বিদ্যুতের ওপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক মুহূর্ত চলা যায় না বিদ্যুৎ ছাড়া। পড়াশোনা, প্রযুক্তি ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজন বিদ্যুৎ। উৎপাদন-বিপণনকে স্বাভাবিক, চলমান রাখতে গ্যাসের প্রভাব অপরিসীম। কেননা, বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে গ্যাস। দৈনন্দিন রান্না থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে তেলের প্রয়োজন অথচ তেলের দাম এখন আকাশচুম্বী। যদিও দেশে ভোজ্য তেলের দাম কমতির দিকে বলে শোনা গেছে। এমতাবস্থায় সীমিত ও পরিমিত ব্যবহারই পারে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে। 

এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, নির্বিচারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় করি আমরা। রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার মতো বিষয়টি। অনেকেই অকারণে বা খেয়ালের ভুলে বিদ্যুতের অপচয় করেন; গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখেন সারা দিন। আবার কেউ কেউ গ্যাস দিয়ে কাপড় শুকানোর কাজও করেন—এ সংখ্যাটাও কম নয়। এই সংকটের সময় এই সমস্ত বিষয়ে নজরদারির প্রয়োজন। বিলাসিতার বশে গ্যাস, বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন