শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঈশ্বরগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়ছে

আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৬

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গোবর প্রক্রিয়াজাত করে প্রস্তুত করা হচ্ছে উৎকৃষ্ট জৈব সার। এই সারের নাম হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার। উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঐ গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক (৪০) তার বাড়ির আঙ্গিনায় ছায়াযুক্ত স্থানে টিনশেডের ঘরে রিং চাড়ি ও হাউজ স্থাপন করে পুরোনো গোবর আর রেড বেঙ্গল কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেছেন। প্রতিটি রিং এ দুই থেকে আড়াই হাজার কেঁচো রয়েছে। 

ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক জানান, কেঁচো গোবর খেয়ে যে মল ত্যাগ করে সেটাই ভার্মি কম্পোস্ট সার। ১০০ কেজি গোবর খাওয়ার জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার কেঁচোর প্রয়োজন হয়। ঈশ্বরগঞ্জে এই সার উৎপাদনে প্রথম পরামর্শদাতা হলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকছার খান ও তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা সাধান কুমার গুহ মজুমদার। তাদের পরামর্শে প্রথম ২০২০ সালে ১০টি রিং স্থাপন করে রেড ওয়ার্ম কেঁচো দ্বারা এই সার উৎপাদন শুরু করেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রথম বছরে তার আয় হয় ৪৪ হাজার ৭০ টাকা। পরবর্তীতে কলেবর বৃদ্ধি করে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার মূলধন কাটিয়ে ২০২১ ও ২০২২ সালে স্থানীয় ও উপজেলার বাহিরে কৃষকদের কাছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০ টাকার ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করেন। এতে তার লাভ হয় ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা। 

মোজাম্মেল হক আরো জানান, একবার মূলধন বিনিয়োগ করলে আর নতুন করে মূলধনের প্রয়োজন হয় না। তিনি নিজে ও তার স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩০) সার উৎপাদন কাজ দেখভাল করে থাকেন। এ সার উৎপাদনে অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। আমাদের দেশে রেড ওয়ার্ম ও টাইগার ওয়ার্ম কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন হয়ে থাকে। কৃষক মোজাম্মেল হক তার বাড়িতে ৮৩ টি রিং থেকে ১০/১২ দিন পর পর ১২ থেকে ১৩ মন ভার্মি কম্পোস্ট সার উত্তোলন করে থাকেন। প্রতি মণ ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। এই সার ব্যবহার করে জমিতে আশানুরূপ ফলন পেয়ে কৃষকরা খুবই খুশি। দিন দিন এই সারের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার উত্পাদিত সার ধান, পাট, শাকসবজির চাষিরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। এছাড়া ছাদ বাগান, মাল্টা বাগান, আমবাগান এই সার ব্যবহার করা হয়। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা টিটন বিশ্বাস বলেন, উপজেলায় সফল উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক ছাড়াও মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া গ্রামের নুরুল আমিন শিমরাইল গ্রামের মনির উদ্দিনসহ ২০ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। কেঁচো সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিলেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, কেঁচো সার সম্পূর্ণ অরগানিক সার। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে মাটি সমৃদ্ধ হয়। 

ইত্তেফাক/এআই