ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় নিহত মায়ের গর্ভ ফেটে জন্ম নেওয়া সেই শিশুটি অবশেষে ‘ছোটমনি নিবাসে’ নেওয়া হচ্ছে। নবজাতক কন্যা শিশুটিকে ঢাকার আজিমপুরে ছোটমনি শিশু নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (২৯ জুলাই) সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাকে সেখানে পাঠাবে জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসন ও ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসন এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক সভা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিশুটি চিকিৎসাসহ ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে শিশুটিকে ছোটমনি নিবাসে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘শিশুটিকে ঢাকার আজিমপুরে ছোটমণি শিশু নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হবে। সরকারি নিবাসে থাকলে শিশুটির থাকা খাওয়া চিকিৎসা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না।’
তিনি আরো জানান, শিশু কল্যাণ বোর্ডের এক সভায় শিশুটির দাদাসহ তার স্বজনদের উপস্থিতিতে শিশুটির লালন পালনের লোকবল ও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিশুটির অভিভাবক হিসেবে দাদা মোস্তাফিজুর রহমানের মতামত নিয়েই তাকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হচ্ছে।
শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নাতিকে নিজেদের কাছেই রেখে লালন পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার আর্থিক ও বাড়ির পরিবেশ ভালো না থাকায় ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেব শিশুটিকে সরকারি ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে আমি খুশি। কারণ ছোটমণি নিবাসে আগামী ৬ মাস থাকবে আমার নাতি। এই সময়টাতে অভিভাবক হিসেবে যে কোনো সময় তাকে দেখতে যেতে পারব। আমার বাড়ির পরিবেশ ভালো না থাকায় ডিসি সাহেব দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর নাতনিকে বাড়ি নিয়ে আসবো।’
বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং শিশুটি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মায়ের পেট চিড়ে জন্ম নেয় এক শিশু। এসময় মারা যান শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২) মা রত্না বেগম ও ছয় বছরের বোন সানজিদা।
এরপর শিশুটিকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ভর্তি করা হয় নগরীর বেসরকারি লাবীব হাসপাতালে। সেখানে জন্ডিসসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ রয়েছে।