ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় নিহত মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেওয়া সেই শিশুটি অবশেষে ‘ছোটমণি নিবাসে’ নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার( ২৯ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজীর কক্ষে শিশুটিকে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করে।
এ সময় শিশুটির দাদার উপস্থিতিতে হস্তান্তরপত্রে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের পক্ষে সই করেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটের ইনচার্জ (নার্স) শান্তি লতা এবং আর সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষে সই করেন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।
পরে বেলা ১১টায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাইক্রোবাসে করে শিশুটিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ সরকারি বালিকা এতিমখানার কর্মচারী তাহমিনা আক্তার স্বপ্না শিশুটিকে কোলে নিয়ে যান রাজধানীর ছোটমণি নিবাস পর্যন্ত। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, সমাজকর্মী আবদুল্লাহ সুমন, শিশুটির বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস ও পুলিশের একটি দল। দুপুর আড়াইটায় শিশুটি নিয়ে তারা পৌঁছান ছোটমণি নিবাসে। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকার আজিমপুর ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জুবলী বেগম রানুর কাছে হস্তান্তর করা হয় শিশুটিকে।
এর আগে ময়মনসিংহ জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক শিশুটিকে আজিমপুর ছোটমণি নিবাসের পাঠানোর বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসাসহ ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, শিশুটি ছোটমণি শিশু নিবাসে থাকলে তার থাকা খাওয়া চিকিৎসা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। শিশু কল্যাণ বোর্ডের এক সভায় শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমানের মতামত নিয়েই তাকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হয়।
শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের নাতিকে নিজেদের কাছেই রেখে লালন পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার আর্থিক ও বাড়ির পরিবেশ ভালো না থাকায় ডিসি স্যার শিশুটিকে সরকারি ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে আমি খুশি। কারণ, ‘ছোটমণি নিবাসে আগামী ৬ মাস থাকবে আমার নাতি। এই সময়টাতে অভিভাবক হিসেবে যেকোনো সময় তাকে দেখতে যেতে পারব। ডিসি স্যার আমার বাড়িতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর নাতনিকে বাড়ি নিয়ে আসবো।
গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেয় এক শিশু। এ সময় মারা যান শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২) মা রত্মা বেগম ও ৬ বছরের বোন সানজিদা। এরপর শিশুটিকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ভর্তি করা হয় নগরীর বেসরকারি লাবীব হাসপাতালে। সেখানে জন্ডিসসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ রয়েছে।