রোববার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না নদীতে, বিপদে দক্ষিণ উপকূলের জেলেরা

আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ০৩:২৭

সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। নিষেধাজ্ঞার শেষ রাত থেকে ইলিশ শিকারে সারি সারি ফিশিংবোটে সমুদ্রযাত্রা করে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে। ইলিশের ভরা মৌসুমে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা পেলেও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার অন্তর্গত নদীর চিত্র একেবারে ভিন্ন। আশায় বুক বেঁধে জেলেরা নদীতে গিয়েও ফিরে আসছে শূন্য হাতে। জ্বালানি খরচ মেটাতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। নদীতে আশানুরূপ মাছ না থাকায় ব্যাবসায়িক ক্ষতির মুখে রয়েছে আড়তদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য বলছে, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এটিই সাফল্য। ইলিশ মাছ নোনা পানিতে ডিম ছাড়তে পারে না। ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানি দরকার। সেজন্য গভীর সমুদ্র থেকে নদীতে মাছ উঠে আসে। ডিম দেওয়া শেষ হলে আবার গভীর সমুদ্রে চলে যায়। তাদের ধারণা, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নদীতে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলবে। এ উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ১২ হাজার ৮২০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন।

‘আগুনমুখা নদীতে মাছ ধরে ঘাটে ফিরেছেন জেলে বাবুল হাওলাদার। হাতের চার আঙুলে চারটি মাছ গেঁথে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে। তার হাতে থাকা চারটে মাছের তিনটা জাটকা আর একটি বড় সাইজের। নদীতে কেমন ইলিশ ধরা পড়ছে জানতে চাইলে বললেন, বছর তিনেক আগেও এই আগুনমুখা নদীতে মাছের কমতি ছিল না। মাছ ধরে আমাদের সংসার চলত। সে বছর মাছ বেশি পাওয়ায় ধারদেনা এবং এনজিও ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু টানা দুই বছর ধরে নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। যে সঞ্চয় ছিল তা তো নদীতে ঢেলে দিয়েছি। এর পরেও মানুষের থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে মাছের কারবার (ব্যবসা) করতে হচ্ছে। আমার জন্ম জেলের ঘরে, এটাই আমাদের মূল পেশা। এর বাইরে কোনো কর্মতেই মন বসে না, যখন মাছের কথা শুনি। এখন দৈনিক ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয় নদীতে গেলে। আর মাছ পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার। যত দিন যাচ্ছে ততই ঋণী হচ্ছি। শুধু জেলে সুমন নয়, একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেল উপজেলার চর মোন্তাজ, মৌডুবী, রাঙ্গাবালী ও ছোট বাইশদিয়া মৎস্য ঘাটের জেলের সঙ্গে কথা বলে।

কোড়ালিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সভাপতি জহির হাওলাদার বলেন, সরকার যে সময় যে অবরোধ দেয় আমরা তা মেনে চলি। অবরোধ শেষ হইছে এক সপ্তাহ হইছে। এখন সাগরে ইলিশ মাছের দেখা মিলছে। সাগরের ট্রলার আমাদের ঘাটে ভিড়ে না। আমরা নদীসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী। নদীতে মাছ পড়লে আমাদের পাল্লায় মাছ ওঠে আর না পড়লে ঝিমিয়ে থাকে এ ঘাট। নদীতে তেমন মাছ না থাকায় শুধু জেলেরা নয় আমরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে আছি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল হক বাবুল বলেন, আশা করছি এক-দেড় মাসের মধ্যে নদীর জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়বে। যার ফলে জেলেরা সব ক্ষতি কাটিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে।

ইত্তেফাক/ইআ