বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১
The Daily Ittefaq

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সমন্বিত উদ্যোগ 

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ০৩:৩৯

ডেঙ্গু বর্তমান বাংলাদেশের এক অন্যতম আতঙ্কের নাম। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে মশাবাহী রোগসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী হলো ডেঙ্গু। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। সে সময় ৫ হাজার ৫০০ মানুষ আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে। এরপর থেকে প্রতি বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করে ২০১৯ সালে। বছরটিতে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ১৭৯ জন।

মূলত এডিস এজিপ্টি নামক এক জাতের মশার কামড় থেকে হয় এ রোগ। ছোট কালো রং, পায়ের সাদা এবং শরীরের রুপালি সাদা ব্যান্ড দেখে এদের শনাক্ত করা যায়। ফেলে রাখা টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, ফুলের টব, ডাবের খোসা, দীর্ঘদিন পাত্রে জমে থাকা পানির মধ্যে বংশ বিস্তার করতে পছন্দ করে এ মশা। এক চামচ পানিতেই এরা ডিম পাড়তে পারে ও সেই লার্ভা থেকে সম্পূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক মশা তৈরি হওয়া সম্ভব। এ মশা কামড়ানোর দুই থেকে ছয় দিনের মধ্যে ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। এ রোগে জ্বর, গায়ে ব্যথা, পেট ব্যথা; বমিসহ, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, লিভার ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউরের মতো জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়ে রোগীর প্রাণ সংশয় পর্যন্ত ঘটতে পারে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিরোধই এ ভাইরাস মোকাবিলার একমাত্র পন্থা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা সময়ের দাবি। সরকার এবং জনগণের সমন্বিত উদ্যোগই পারে এ মহামারি থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখতে। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা, মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণ, মশক নিধন কীটনাশক প্রয়োগ এবং গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উভয়পক্ষকেই এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গু ভাইরাসের জন্য সহায়ক। সুতরাং রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন মশার উত্স নির্মূল করা। ব্যক্তি পর্যায়ে খুব সাধারণ কিছু নিয়ম মেনেই ডেঙ্গুকে রুখে দেওয়া সম্ভব। সাধারণত পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিই ডেঙ্গু মশকীর ডিম পাড়ার আদর্শ স্থান। সেজন্য বাড়ির ভেতরে বা বাইরে জমে থাকা পানির বিষয়ে সচেতন দৃষ্টি দিতে হবে। বাড়িতে থাকা ফুলদানি, কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদিতে যেন কোনোভাবেই দীর্ঘসময় পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনের নিচে পানি যেন দীর্ঘদিন জমে থাকতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। দিনের বেলা মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মশা নিরোধক ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘুমানোর আগে মশক নিধন স্পে্র বা মশারি অত্যাবশ্যক।

বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের যে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে সেগুলোকে আমাদের দেশের ব্যবহারোপযোগী করে তোলার বিষয়ে সচেতন দৃষ্টি দিতে হবে। মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণে ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ পদ্ধতি ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট গবেষকদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত মশক নিধন স্পে্র অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কীটনাশক এবং স্পে্রকে সহজলভ্য করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনে বিশেষ ফোর্স কাজে লাগাতে হবে, সেই সঙ্গে গৃহীত পদক্ষেপের কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ করা গেছে। তাই জেলা শহরগুলোতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া সব রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সর্বোপরি ডেঙ্গু একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান করা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। ডেঙ্গু মহামারি থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। নিজে সচেতন না থেকে শুধু সরকারের সমালোচনা যেমন ডেঙ্গু থেকে মুক্তি দিতে পারবে না, একইভাবে তা হবে জনস্বাস্হে্যর জন্যও হুমকিস্বরূপ। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা। পাশাপাশি প্রয়োজন সরকার-জনগণ সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রয়োগ। শুধু উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ এবং পরিকল্পিত উদ্যোগই পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে এ সংকট থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন