জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অভ্যন্তরে ভর্তি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষায় কৃতকার্য করানোর আশ্বাসে ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে কর্মশালার নামে এ কোচিং সেন্টার পরিচালিত হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ কোচিং সেন্টার চললেও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের অধীনে চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফের ২০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার পর থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত এ কোচিং পরিচালনা করেন। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কয়েক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, গত ১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সামনে ‘নোঙ্গর’ ও পুরাতন কলা ভবনের সামনে ‘চারুছায়া’ নামে ভর্তি কোচিং পরিচালনা করেন চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও আরো কয়েকটি ভর্তি কোচিং পরিচালনা করেছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোতে এই কর্মশালায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ ব্যবহারিক পরীক্ষায় ভালো করেছেন। তাই এখানে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
এদিকে কর্মশালায় ক্লাস করতে আসা এক ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ায় এবং গত কয়েক বছর একই কোচিং সেন্টার থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় কর্মশালার নামে কোচিং সেন্টার পরিচালনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবহার করে কোচিং সেন্টার পরিচালনা কতটা যৌক্তিক—সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা জড়িত থাকতে পারে কি না—তা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও ‘নোঙ্গর’-এর পরিচালক রাহুল প্রসাদ দাস বলেন, ‘আমরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কর্মশালা করিয়েছি। এটাকে কোচিং সেন্টার বলা যায় না। কর্মশালায় যারা ক্লাস নেন তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এ ধরনের কর্মশালা করার কোনো বাধা-নিষেধ নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সভাপতি ফারহানা তাবাসসুম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পরিচালিত কোচিং সেন্টারের সঙ্গে আমাদের বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এসব কর্মকাণ্ডে বিভাগের শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ বলেন, বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তি উদ্যোগে কর্মশালা পরিচালনা করছেন। তবে তাদের কর্মকাণ্ডে বিভাগের শিক্ষকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বিধায় তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।