মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কমেছে আমদানিপ্রবাহ, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অপেক্ষায় জেটি

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২২, ০২:০৫

বাংলাদেশে আমদানি পণ্যপ্রবাহ পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে মার্জিন অনেক বেশি হওয়ায় পূর্বে আমদানির যে ব্যাপক মাত্রা ছিল তা অনেকটা কমে গেছে। আবার এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে ডলার মূল্য খোলা বাজারের ডলার মূল্যের প্রায় সমপরিমাণ চার্জ নেওয়ায় অনেক আমদানিকারক এলসি খুলতে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন।

জানা গেছে, আমদানি ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহীরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি থেকে সরে আসছেন। বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে পূর্বে যেখানে এলসি মার্জিন ছিল শতকরা ১০ ভাগ। বর্তমান অবস্থায় আমদানিকারককে খোলা বাজার মূল্যে শতকরা ৫০ ভাগ থেকে ৭০ ভাগ নগদ ব্যাংকে দিতে হচ্ছে। যা সাধারণ আমদানিকারকের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এলসি খোলার পর দিন থেকেই তাকে উক্ত এলসি মূল্যের ওপর সুদ গুনতে হচ্ছে। সরকারের পরিসংখ্যানও বলছে, গত মাসে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ শতকরা ৩১ ভাগ কমে গেছে।

শিপিং ব্যবসায়ীরা জানান, সিঙ্গাপুর, কলম্বো, চায়নাসহ বিভিন্ন বন্দরে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখী আমদানি পণ্যের মজুত কমে গেছে। ফলে ঐ সব বন্দরে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখী পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় ঐসব রুটে চলাচলকারী অনেক ফিডার জাহাজ সংশ্লিষ্ট বন্দরের জেটিতে না গিয়ে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর কিংবা চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে চলাচলকারী ফিডার জাহাজ কোম্পানি পূর্বে সাত/আট জাহাজ দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কমিয়ে দিয়েছেন বলে শিপিং ব্যবসায়ীরা জানান। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, গত ১৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাত্র তিন দিন বহির্নোঙ্গরে একটি করে কন্টেইনারবাহী জাহাজ ছিল। বাকি ১২ দিন প্রতিটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ কোনো প্রকার অপেক্ষা ছাড়াই সরাসরি বন্দরের নির্দিষ্ট জেটিতে গিয়ে পণ্য খালাস করতে পারছে। জাহাজের অন-এর্যাইভাল বা সরাসরি জেটিতে বার্থিংয়ের সুযোগ পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম যেমন বাড়ছে, একইভাবে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষা করার প্রয়োজন না পড়ায় জাহাজ কোম্পানিকে ডেমারেজ চার্জ দিতে হচ্ছে না। কারণ প্রতিদিন একটি জাহাজ বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষার জন্য জাহাজ মালিককে ক্ষেত্রভেদে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হতো। যা আমদানি পণ্যের ওপর পড়ত। অর্থাৎ শেষ পর্যায়ে ভোক্তারা তা বহন করত। 

আবার বাল্ক কার্গো বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৫ দিনের মাত্র চার দিন একটি করে জাহাজ বহির্নোঙ্গরের অপেক্ষায় ছিল। বাকি ১১ দিন সরাসরি জেটি বার্থিং পেয়েছে। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বহির্নোঙ্গরে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। একইভাবে খোলা পণ্যবাহী জাহাজকে ৯ দিন পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন জানান, বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ায় এক দিকে ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। তাতে করে আমদানি কমে গেছে।

ইত্তেফাক/ইআ