বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুইসাইডাল থট থেকে মুক্তির উপায়

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:০৭

জীবনকে ঘিরে পরিবার, শিক্ষা, ক্যারিয়ার, ভালবাসা চক্রে একটু এদিক সেদিক হলে যে কেউ নিজ ব্রেইন এর ভুল সিদ্ধান্তের ষড়যন্ত্র এর শিকার হয়। আত্মহত্যার চিন্তা এমন চিন্তা যেখানে মানুষ নিজেই নিজের জীবনে ভিলেন এর ভূমিকা পালন করে। 

সুইসাইডাল থট যেকোন বয়সের মানুষের মধ্যে হতে পারে যে কোন সময়ে। ইদানীং টিনেজারদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচে বেশি দেখা যাচ্ছে। টিনেজারদের মধ্যে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার প্রবণতা বেশি, তারা কোন প্রবলেম ফেস করার মত যথেষ্ট সাহস রাখে না এবং আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তির উপায় খুঁজে। 

সব সময় যে মন খারাপ, হতাশা কিংবা নিজেকে ব্যর্থ মনে করে নিজেকে শেষ করে দেবার চিন্তা মাথায় আসছে তা কিন্তু নয়। অদ্ভুতভাবে সফল হবার পর কিছু মানুষ ভেবে নেয় যে জীবনে যা পাওয়ার পেয়ে গেছি আর কিছু চাই না এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় সুইসাইড করার। কারণ যাইহোক না কেন আত্মহত্যার চিন্তা ভুল করেও মাথায় আনা যাবে না। 

বলা হয় আত্মহত্যা মহাপাপ। জীবন একটা উপহার এবং একে যাপন করা একটা শিল্প। 

খুব তুচ্ছ কারণে আবেগপ্রবণ মন চ ল হয়ে উঠে নিজের ছোট্ট কোন ব্যর্থতাকে অনেক বড় কল্পনা করে সমাধানের পথ না খুঁজে মনের মধ্যে নেগেটিভ মেঘ জমাট বাঁধে। কিন্তু মনের আকাশ কে রাখা চাই সবচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সবকিছুর আগে ধৈর্য্য এর প্র্যাকটিস থাকা চাই জীবন এ। অপেক্ষা করা জানতে হবে । ছোট ছোট ব্যাপারে কোন অস্থিরতা চলবে না। মনে রাখবেন মন ভীষণ চ ল একে স্থির রাখতে চাই নিয়মিত অনুশীলন।

যে কোন পরিস্থিতিতে নিজের ব্রেইনকে শান্ত রাখা স্মার্ট ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। সব কিছুতে রিয়েক্ট না করাও একটা পজিটিভ আচরণ। পৃথিবীর সবকিছুর দায়িত্ব আপনার নয় আপনি চাইলেও মূহুর্তে সব পাল্টে দিতে পারবেন না সুপার হিরোর মত তাই সব কিছুতে রিয়েক্ট না করে নিজের জীবন এর সুপার হিরো হয়ে নিজেকে পাল্টান। যে যে চেঞ্জ আপনি প্রত্যাশা করুন সেগুলো প্র্যাকটিস করুন নিজেই। নিজেকে জানুন। আপনি কি চান আপনার ভাল লাগা মন্দ লাগার লিষ্ট করুন। 

ঠিক এই মুহূর্তে কেন আপনার ব্রেইনে সুইসাইডাল থট খেলা করছে সেটার আসল কারণ বুঝে কাগজে কলমে লিখুন। এবার কিভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব সে বিষয়ে একটি প্রডাকটিভ একশন প্লান করুন। সমস্যার সমাধান যত দ্রুত করতে পারবেন তত দ্রুত আত্মহত্যার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন।

এক ধরনের মানুষ আছে যারা ভেবে নেয় কোন কাজের জন্য তাদেও কারো না কারো সহযোগিতা দরকার এমনকি তারা এ ও ভেবে নেয় তাদের জব পাওয়ার জন্য কাউকে দরকার কেউ নেই বলে তার কিছু হচ্ছে না । এসব আত্মবিশ্বাসহীন নেগেটিভ চিন্তাগুলো দূর করেই সারা দেশে এখন উদ্যোক্তাদের জয়জয়কার। অনেকে ব্যবসায় লোকসান এর কারণেও সুইসাইড করতে চায়। কিন্তু আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। পরনির্ভরশীলতার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। 

সুইসাইডাল থট হলে নিজেকে বুঝতে হবে আপনি এক মানসিক রোগ এর মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে সেলফ মোটিভেশন এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

তবে যেহেতু আপনার সমস্যা সেটা সমাধানের উপায় ও সম্ভাবনা আপনার চেয়ে কেউ ভাল জানে না সেক্ষেত্রে নিজে শান্ত হয়ে ভাবুন। নিজেকে সময় দিন। প্রচুর পানি, ডাবের পানি,জুস কফি , চকলেট খান। মনকে শান্ত করতে মনোযোগ দিতে কোন ছবি আকুন , মিউজিক শুনুন। ১০/১৫ মি ধ্যান করুন। সর্বোপরি নিজেকে মোটিভেটেড রাখার চেষ্টা করুন। যখন দেখছেন নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তখন অবশ্যই কাছের কোন মানুষ/প্রিয়জন বা বন্ধুকে জানান যার সাথে আপনার কথা বললে ভাল লাগবে। 

বর্তমানে মানুষ ভীষণ নিঃসঙ্গতায় ভোগে। সম্পূর্ণ একার জীবন হলে সময় কে ভাগ ভাগ করে নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। 

সুইসাইডাল থট সবসময় বিপদজনক এ কারনে যে এই নেগেটিভ চিন্তাটা মানুষকে ক্রমশ নিজেকে শেষ করতে আগ্রহী করে এতে সাবকনশাস মাইন্ড ও উপায় খুঁজে দেয় ভুল করার। অথচ কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে সাবকনশাস মাইন্ড সমাধানের পথও খুঁজে দেয়। তাই ভুল চিন্তাকে সমাধানের চিন্তায় ডাইভার্ট করা জরুরী। 

বাহ্যিক রুপচর্চ্চার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে নিজের ব্রেইনকে স্মার্ট রাখা যায়। স্মার্ট ব্রেইন কখন শর্টকাট সফলতা কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না । স্মার্ট ব্রেইন এর জন্য চাই প্রতিদিন এর চর্চ্চা। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পজেটিভ এফারমেশন, আত্মবিশ্বাস, বই পড়া, গান শোনা, ভ্রমন, সুস্থ বিনোদন ,শখ, ভালবাসা মানুষকে পজেটিভ আচরনে একটিভ রাখে।
 
মানুষ মাত্রই ভালবাসা চায় । অনেকে পোষা প্রানীর সাথে সময় কাটিয়ে মটিভেটেড থাকে কেউ বা বøগিং করে। মানুষ প্রশংসা চায় নিজেকে গুরুত্বপূর্ন কওে তুলতে চায়। কিন্তু যদি আবার প্রতিযোগিতায় গড়ায় তখন হতাশা আসে। তাই এক্সপেকটেশন লেভেল জিরো থাকা চাই ।  যতটুকু  যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থেকে সামনে আরো ভাল কিছু করার আগ্রহে এগিয়ে যেতে হয়। বিস্ময়বোধ জীবনকে সুন্দর করে ।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো সময়টা টনিক এর মত কাজ করে জীবনকে আনন্দময় কওে তুলে। নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসা ফুল উপহার দেওয়া মানুষের সাথে ভাল আচরন প্রতিদিন নিজের পছন্দমত কাজ করতে পারা জীবনকে অর্থবহ করে তুলে। সব সময় মনে রাখতে হবে পৃথিবীকে দেবার মত অনেক কিছু আছে আপনার । জীবনে ছোট ছোট ঢেউ আসবে সেই ঢেউ এর সাথে খাপ খাইয়ে সাঁতার কাটার নাম ই বেঁচে থাকা। বেঁচে থেকেই উপভোগ করতে হবে সময়কে। একমাত্র বেঁচে থাকলেই আপনি দেখতে পাবেন সাফল্য। একটি অটো সাজেশন চলুক মনে “জীবন সুন্দর।”


লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, ইয়ারা(ইনভিশন একশন রিওয়ার্ড এ্যাসেট) নারীর ক্ষমতায়নে গ্রাম ভিত্তিক মটিভেশনাল কার্যক্রম।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন