চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসাসেবায় দুরবস্থা চলছে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত। রোগ নির্ণয়ের ল্যাব, এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন পরিচালনায় জনবল নেই। তাই এসব যন্ত্রপাতির সুবিধা পাচ্ছে না রোগীরা। হাসপাতালে চিকিৎসক দুই জন। নার্সও দুই জন। এরাই হাজারো বন্দির চিকিৎসা সেবা দেন। রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা ও জটিল রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ততক্ষণে জটিল রোগীর অবস্থার অবনতি হয়ে যায়।
কারা হাসপাতালটি তিনতলা বিশিষ্ট। ভবনটির অবকাঠামো হাসপাতালের উপযোগী নয়। হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। কিন্তু জনবল সে অনুপাতে নেই। রয়েছেন সহকারী সার্জন পদের দুই জন মেডিক্যাল অফিসার। আর দুই জন ডিপ্লোমা নার্স। টেকনেশিয়ান এক জন। এক্স-রে মেশিন বসানোর জন্য আলাদা কক্ষ নেই। অব্যবহৃত মেশিনটি হাসপাতালের এক কোনায় পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের ল্যাবের জন্য ২০১১ সালে যন্ত্রপাতি কেনা হয়। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি যথা স্থানে বসেনি। এগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে বর্তমানে ৭৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন। দুই জন নারী রোগী। ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, প্যারালাইসিস, যক্ষ্মা, পাইলস ও মানসিক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাত জন ক্যানসার রোগী রয়েছেন। পাইলসের রোগী সবচেয়ে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য অসুস্থ রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নিতে হয়। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগ নির্ণয় পরীক্ষা চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ল্যাবে করতে হয়। রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন সময় লাগে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বন্দিকে ফের হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। আবার বন্দিদের আনা-নেওয়ায় কয়েক জন কারারক্ষীর প্রয়োজন হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে একটি প্রিজন সেল রয়েছে। তবে সেখানে রেখে বন্দি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রিজন সেলে আসতে চায় না। ফলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পাহারায় রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। কারা হাসপাতালে কয়েক জন প্যারালাইসিস রোগী রয়েছে। তারা নিজেরা নড়াচড়া করতে পারে না। বর্তমানে তিন জন যক্ষ্মা রোগী ভর্তি রয়েছে। কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শামীম রেজা বলেন, হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা চালু থাকলে রোগীরা উপকৃত হতেন। জনবল না থাকায় এসব পরীক্ষা চমেক হাসপাতালের ল্যাব থেকে করতে হচ্ছে। আর জটিল রোগীদের আমরা চমেক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা করাচ্ছি। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জনকে চিকিৎসা দিতে হয়। অত্র অঞ্চলের পাঁচটি কারাগারের অসুস্থ বন্দিদের চট্টগ্রাম কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়।’
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি কারাগারের অসুস্থ বন্দিদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। এসব কারাগারের কোনো বন্দি অসুস্থ হলে বা চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চট্টগ্রামের কারাগারের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দীর্ঘদিন যাবত চরম পানিসংকট বিরাজ করছে। কারাগারের ছয়টি ভবনের মধ্যে চারটি ভবনে সরবরাহ লাইনে ত্রুটির কারণে পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, মূলত পাইপলাইনের সমস্যার কারণে নয়। এখানে দৈনিক চাহিদার চেয়ে পানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেক। ফলে পাইপলাইনে চাপ বাড়ানো যাচ্ছে না। যেখানে দৈনিক সোয়া ৪ লাখ লিটার পানির চাহিদা সেখানে দৈনিক ২ লাখ লিটার পানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। কারাগারে গ্যাসসংকট আরও প্রকট। দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকে না। সকাল ৯টার পর সরবরাহ লাইনে গ্যাস চলে যায় রাত ৯টার পর আসে। এতে কয়েক হাজার বন্দির রান্না নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।