চেয়ার-টেবিল নেই, নেই কোনো বাহারি অঙ্গসজ্জা। তারপরও প্রতিদিন দুপুর নাগাদ রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতঘেঁষে খোলা আকাশের নিচে একটি ভালো কাজের বিনিময় খাবার খেতে হাজির হয়ে যান কয়েক শ মানুষ।
বিনামূল্যে ‘ভালো কাজের বিনিময় খাবার’—এমন মহৎ উদ্যোগ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। এই হোটেলে খাবার খেতে হলে আপনাকে দিতে হবে না কোনো পয়সা; তবে জানাতে হবে দৈনিক ন্যূনতম একটি ভালো কাজের কথা। গত ২ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে কমলাপুর, তেঁজগাও, বনানী এসমস্ত জায়গায় ফুটপাতের দেয়ালে লাল রঙে বড়ো করে লেখা ‘ভালো কাজের বিনিময় খাবার’-এর সামনেই খোলা আকাশের নিচে একটি করে ভালো কাজের বিনিময় অসহায়, দুস্থ, পথচারী, দিনমজুরদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছে ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ নামক সংগঠন।
এই হোটেলে খাবার খেতে আসা বেশিরভাগ মানুষই নিম্নআয়ের শ্রমজীবী, কুলি, পথচারি এবং ভিক্ষুক। ভালো কাজের হোটেলের উদ্যোক্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, "ছোটবেলায় আমি হুমায়ূন আহমেদের 'সবুজ ছায়া' নামের একটি নাটক দেখেছিলাম। তখন খুব সম্ভবত তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি। ঐ নাটকে অভিনেতা জাহিদ হাসান প্রতিদিন অন্তত একটি করে ভালো কাজ করতেন। ছোটবেলায় দেখা নাটকে সে দৃশ্য দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এবং আমার কিছু বন্ধু মিলে এই ভালো কাজের হোটেল চালু করি।"
যাত্রা শুরুর দিকে মাসে ১০-১২দিন কার্যক্রম চালালেও বর্তমানে প্রতিদিনই এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। রাজধানীর ভিন্ন তিনটি স্থানে প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৭০০ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করছে সংগঠনটি। খাবার বিতরণের আগে সংগঠনের একজন সেচ্ছাসেবক কলম-কাগজ নিয়ে এক এক করে সবার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেন, আজকের দিনে কে কী ভালো কাজ করেছে; এবং সেসব খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তবে কেউ যদি ঐদিন কোনো ভালো কাজ নাও করে থাকেন, তাহলেও তার নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ঐদিনে কোনো ভালো কাজ করা ছাড়াও তাকে খালি মুখে সে হোটেল থেকে ফিরে আসতে হবে না। পরদিন একটা ভালো করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেই মিলবে খাবার।
‘ডেইলি টেন মেম্বারস’ নামে ফেসবুকে উদ্যোক্তাদের গ্রুপে প্রায় দেড় হাজারের মতো সদস্য রয়েছে; যাঁরা প্রতিদিন ১০টাকা করে জমা দেন। ফলে মাস শেষে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হয়, এ টাকা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও শুভাকাঙ্খীরাও ভালো কাজের হোটেলের জন্য উদ্যোক্তাদের কাছে অর্থ অনুদান দিয়ে থাকেন। আরিফুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে যন্ত্রণাকর হলো ক্ষুধার কষ্ট! এই ক্ষুধার যন্ত্রণার কারণে অসংখ্য মানুষ খারাপ পথ বেছে নেয়— এ বিশ্বাস থেকে ক্ষুধা ও অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা ২০১৯ সাল থেকে ইয়ুথ পর বাংলাদেশ সংগঠনের অধীনে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। সবচেয়ে আনন্দ ও ভালো লাগার ব্যাপার হলো, সারাদিন পরিশ্রমের পরে, যখন আমাদের দেয়া খাবার তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার পর মানুষের মুখে হাসি দেখি, তখন খুশিতে আমাদেরও মন ভরে যায়।’