শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আতঙ্ক কাটছে না সীমান্তে, তুমব্রুর ৩০০ পরিবারের জন্য খোঁজা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয় 

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২৭

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলির কারণে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। রাতদিন সমানতালে গোলাগুলি চলতে থাকায় সীমান্তবর্তী এলাকার ৩০০ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। এজন্য নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গতকাল সোমবার সকালে তুমব্রু এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। বেলা ১১টার দিকে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখেন ডিসি।

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় সীমান্তে বাংলাদেশি যেসব পরিবার ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বসবাসকারীদের মতামতের ভিত্তিতেই তাদের সরানো হবে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া আছে, পরিস্থিতি খারাপ হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, মূলত তুমব্রু, ঘুমধুম, ফাত্রাঝিরি সীমান্তের খুব কাছে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সরানো হবে। এজন্য নিরাপদ জায়গা খোঁজা হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার। সীমান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের আগে ঘুমধুম ইউপি কার্যালয়ে স্থানীয়দের ঝুঁকির বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এদিকে সীমান্তে আতঙ্কের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা চিন্তা করে উখিয়ার কুতুপালংয়ে সরিয়ে নেওয়া ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসির পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। ঘুমধুম বাজার এলাকার বাসিন্দা মোস্তাকিম আজিজ (২৬) জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতে আমরা খুবই আতঙ্কে রয়েছি। দিনরাত সমানে গুলিবর্ষণ ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছে। দেড় মাস ধরে চলা এ সংঘাতে সীমান্তের প্রায় মানুষ স্বজনদের কাছে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। তুমব্রু বাজারের প্রায় দোকানপাট বন্ধ।

ঘুমধুম ইউপির তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলম বলেন, গত রবিবার রাতেও গোলাগুলি চলেছে। গুলির মুহুর্মুহু শব্দে রাত জেগে সময় কাটছে সীমান্তে বসবাসকারীদের। গৃহিণী স্বপ্না বালা (৫০) বলেন, চাষাবাদ দেখতে যাওয়া দূরে থাক, ঘর থেকে বের হওয়াও কঠিন। গোলাগুলির বিকট শব্দে শিশুরাও কেঁপে ওঠছে। পুরো সময় কাটছে আতঙ্কে। কারো বাসায় যাওয়ার মতো স্বজন না থাকায় এলাকাও ত্যাগ করা যাচ্ছে না।

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সীমান্তে বসবাসরত লোকজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সেখানে সার্বিক গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর সীমান্তবর্তী এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবারকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। ওপারে ব্যাপক গোলাগুলিতে সীমান্তের এসব পরিবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে এ আবেদন করেন চেয়ারম্যান। 

  • থেমে থেমে আসছে গুলির আওয়াজ

লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সোমবার সকালেও তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছে সীমান্ত এলাকার লোকজন। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। স্থানীয় ইউপি মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগম জানান, গোলাগুলির আওয়াজের কারণে নারী ও শিশুদের প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সীমান্ত এলাকার লোকজনের দৈনন্দিন কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। 

ইত্তেফাক/ইআ