শারদীয়া দুর্গোৎসব। শরতের কাশফুল আর শিউলি ফুলের সমাহারে আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার আগমনীই শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। একে অকালবোধনও বলা হয়। অকালবোধন কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর অর্থ। অকালবোধনের সঙ্গে জড়িত রামায়ণের অধ্যায়। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। শ্রীরামচন্দ্র অকালে বা অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে শরতকালের পূজাকে দেবীর অকালবোধন বলা হয়। তাই সেই থেকেই শরৎকালে দেবীর পূজা অকালবোধন নামে পরিচিত। মূলত দুর্গাপূজার সময়কাল বসন্তকালে হওয়ায় এই পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। সনাতন ধর্মে কোনো শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজ-সহ সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে হলো খুশি করা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এই দিনে এমনই করেছিলেন।
মহালয়ার মাধ্যমে আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুরু হচ্ছে, অর্থাৎ পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আনন্দময়ীর আগমনে মধুর কলধ্বনি স্ফুরিত হয়ে ওঠে এই তিথিতে। মধুকৈটববিনাশিনী, মহিষাসুরমর্দিনী মহাদেবীর আবির্ভাব ঘটে মহালয়ার পবিত্র মুহূর্তে। শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসাবে পরিচিত। এই দিনে কৈলাশ থেকে মা দুর্গা মর্ত্যে আগমন করবেন। মহালয়া মানে দুর্গাপূজার দিন গোনা। মহালয়ার পাঁচ দিন পরেই আসে মহাষষ্ঠী। ঢাক, শঙ্খ ও উলুধ্বনির মাধ্যমে সবদিকে ছড়িয়ে পড়বে পূজার বার্তা।
মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা। মহালয়ার পরে ১ অক্টোবর রোজ শনিবার দেবীর আমন্ত্রণ, অধিবাস এবং ষষ্ঠী পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘শারদীয় দুর্গাপূজা’।
আর তাই শেষ মুহূর্তে মন্দিরে মন্দিরে রং-তুলিতে সেজে উঠছে দশভুজা দেবী দুর্গা। চলছে দেবী দুর্গার সাজসজ্জা ও পূজার নানা প্রস্তুতি। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা তৈরির কারিগররা। কাশফুল আর শিউলি ফুল দশভুজা দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। এবার দেবী দুর্গা গজ বা হাতিতে চড়ে আসছেন মর্ত্যে। মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও দশমীপূজার মধ্য দিয়ে দশভুজা মা-দুর্গা কৈলাসে ফিরবেন নৌকায় করে।
সনাতন ধর্মের ভক্তরা প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকেন আকাঙ্ক্ষিত বড় উৎসব তথা দেবী দুর্গার আগমনের জন্য। এ উৎসবে পরিবারের সবার মধ্যে মিলন মেলা ঘটে। পুরোহিতের মন্ত্র, ফুল, বেলপাতা ও পূজার নানা উপকরণ দ্বারা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে সবাই প্রার্থনা জানায়। একই সঙ্গে পরিবার ও দেশের মঙ্গল কামনা করেন ভক্তরা।
শারদীয় দুর্গাপূজার সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে। যে কোনো প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি মন্দিরে-মন্দিরে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে শেষ হবে পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা এমনটিই সবার প্রত্যাশা। অশুভ শক্তির বিনাশ হোক, শান্তি বর্ষিত হোক সর্বস্তরে।
লেখক : শিক্ষার্থী, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ