ইলিশ কেন বাংলাদেশের জাতীয় মাছ! এই প্রশ্নের উত্তর অনেকের জানা, আবার অধিকাংশের মাথায়ই ঘুরপাক খাচ্ছে, ইলিশই কেন মাছের রাজা হলো!
বাঙালি সমাজে একটা প্রবাদ যুগ যুগ ধরে প্রচলিত 'মাছে-ভাতে বাঙালী'। আর বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় মাছ ইলিশ। নদীমাতৃক এই দেশে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। নদীগুলোর আকারে যেমন রয়েছে ভিন্নতা, তেমনি নদীর মাছের স্বাদেও রয়েছে তারতম্য।
বর্ষা মৌসুমে সামুদ্রিক ইলিশের ডিম দেওয়ার সময় হলে তারা নদীতে আসে। লম্বা সময় ধরে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ সাঁতার কেটে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে চলে আসে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের বিভিন্ন নদীই এদের ডিম পাড়ার পছন্দের জায়গা। এছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ, ভারতের গঙ্গা ও রুপনারয়ণ নদীতে ও ইলিশ আসে।
স্বাদে, ঘ্রাণে, রূপে অন্যান্য মাছকে পেছনে ফেলে ইলিশ বাঙালি সমাজে ‘মাছের রাজা’ হিসেবে সমাদৃত। শুধু যে রূপে গুণে বিষয়টা এমন ও না, অন্যান্য মাছের পুষ্টিগুণের দিক থেকেও এগিয়ে আছে এই সমুদ্র থেকে আসা নদীর রাজা। ইলিশ মাছ রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে প্রোটিন থাকে ২১.৮ গ্রাম, ভিটামিন সি থাকে ২৪ মিলিগ্রাম, শর্করা আছে ৩.৩৯ গ্রাম, খনিজ রয়েছে ২.২ গ্রাম ও চর্বি ১৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ রয়েছে ১৮০ মিলিগ্রাম, তাছাড়াও রয়েছে খনিজ লবণ, আয়োডিন এবং লিপড। যা অন্যান্য মাছ ও মাংসের তুলনায় অনেক বেশি। ওয়ার্ল্ড ফিশের হিসাবে ওমেগা-৩ পুষ্টিগুণের দিক থেকে স্যামন মাছের পরের স্থান এই ইলিশের। জনপ্রিয়তায় শীর্ষে স্যামন ও টুনা মাছের পরই এই আমাদের ইলিশের অবস্থান।
চিকিৎসকদের মতে, ইলিশ মাছ হার্ট সুস্থ রাখে, রক্ত সঞ্চালন ও বাত নিয়ন্ত্রণের সহায়ক, রাতকানা রোধে, ক্যান্সার মোকাবেলায়, হাঁপানি রোধে, অবসাদ দূর করতে, ত্বকের যত্নে, শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন করতে সহায়ক।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশে আছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন। তাছাড়াও আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তের কোলেস্টেরল ও ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। তাই হৃদরোগীদের জন্য ইলিশের তেল উপকারী। ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম।
ইলিশ মাছের স্বাদ, মাছের ঘ্রাণ আর এতসব গুণের কারণেই মাছের রাজার মর্যাদা পেয়েছে এই ইলিশ মাছ। আর সব দিক থেকে বিবেচনা করেই, বাংলাদেশের জাতীয় মাছও ইলিশ।