ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এতে করে মঙ্গলবার রাত ১১টার পরও অন্ধকারে ছিলো উপজেলার কয়েক হাজার গ্রাহক। গত কাল সোমবার সন্ধ্যার পর মিরসরাইতে ঝড়ো বাতাসে গাছ, বাঁশ উপরে পড়ে বসত ঘর ও বিদ্যুৎ তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পূর্ব দূর্গাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ যাওয়ার পর মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত আসেনি। এমনিতে লোডশেডিং থাকে তারপর গত দুই দিন বিদ্যুৎ না থাকার ফলে দোকানের ফ্রিজে থাকা সব আইসক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ কখন আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এভাবে চললে ব্যবসা করাটা কষ্টকর হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাইফুল আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ ও বাঁশ পড়ে ৭টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। অসংখ্য জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। ক্রসআর্ম পুড়েছে ২টি। খুঁটি হেলে পড়েছে ৬টি। উপজেলার কচুয়া, ঠাকুরদিঘী, উত্তর তালবাড়ীয়া, হাদি ফকিরহাট, নাজির পাড়া, তারাকাটিয়া, এসাক ড্রাইভারহাট, বামনসুন্দর, বিশ্বদরবার, মিঠানালা, খইয়াছড়া সহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তারের উপর গাছ উপড়ে পড়েছে। গাছ কেটে অপসারণের জন্য ১৫টি ‘আলোর গেরিলা টিম’ মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপজেলায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজীরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছারা ঝড়োহাওয়ায় বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলের মিরসরাই উপকূলে থাকা আলতাফ হোসেন, শওকত হোসেন, সুরেশ চন্দ্র দাস, নিমাই চন্দ্র দাস, ইসমাইল হোসেন, ভোটন চন্দ্র দাসসহ প্রায় ২০ জনের ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার বোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর রাত থেকে বৃষ্টিপাত ও বাতাসে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় আমনের রোপা মাটিয়ে নুয়ে পড়েছে। এছাড়া আবাদ করা শীতকালীন সবজি ক্ষেতেও পানি জমেছে। উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৭’শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এখানে দেরিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া উপজেলাজুড়ে এবার ১২০০ একর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে সবজির ক্ষতি হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। কিছু পাকা আমন ধান দ্রুত কেটে ফেলতে কৃষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মৎস্য ঘেরের তেমন ক্ষতি না হলেও উপজেলার বামনসুন্দর এলাকায় মঘাদিয়া ঘাটে জেলেদের মাছ ধরার ২০টি বোট (ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা) ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কয়েকটি বোট পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে।