সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর ও নদীতে নামছেন জেলেরা

আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৯

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা শেষে রাতেই নদী ও সাগরে নামতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতকাল শুক্রবার দিনভর দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও সাগরপাড়ে দেখা গেছে জেলেদের নৌকা ও জাল প্রস্তুতের। জেলেরা কেউ নৌকা মেরামত আবার নৌকা কিংবা ট্রলারে রং দেওয়াসহ ইঞ্জিন মেরামতে ব্যস্ত।

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে জেলেদের সারি সারি নৌকার বহর এবং হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মেঘনা পাড়ে জেলেপাড়াগুলোতেও নৌকার বহর অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা গেছে। সাগর পাড়ের বরগুনা জেলার তালতলী ও আমতলী, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর, কুয়াকাটা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালীর জেলেরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারা জানান ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে তারা মাছ শিকার করতে পারেননি। সংসারে অভাব-অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেকেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাই রাত থেকেই সাগরে কিংবা নদীতে নামতে হবে তাদের।

জাল মেরামতে ব্যস্ত জেলেরা

মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে বিভাগের ছয় জেলায় তাদের তালিকাভুক্ত মোট জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার। তালিকার বাইরেও রয়েছে হাজার হাজার জেলে। ২০০৪ সাল থেকে দেশে জাটকা রক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০০৮ সাল থেকে ১১ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে গবেষণায় দেখা যায় অমাবস্যাতে প্রচুর মা-ইলিশ ধরা পড়ে। তাই অমাবস্যা ও পূর্ণিমার আগে এবং পড়ে মিলিয়ে মোট ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর সুফল হিসেবে ২০০৮-০৯ সালে ইলিশ উৎপাদন বেড়ে প্রায় ৩ লাখ হাজার মেট্রিকটন এবং ২০১৮-১৯ সালে তা বেড়ে ৫ লাখ ৩৩ হাজার এবং সর্বশেষ গত অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন হয়। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিচুর রহমান জানান, মাঠ পর্যায়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের ইলিশ রক্ষায় কঠোর অভিযান পরিচালিত হওয়ায় উৎপাদন আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি জানান, নদীতে ডিম ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইলিশ বাচ্চার জন্ম হয়। মা-ইলিশ প্রজনন করা বাচ্চা নিয়ে তিন মাস নদীতে ঘোরাঘুরি করে। একটি ইলিশ সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এ পর্যন্ত দেশের জলসীমায় সর্বোচ্চ তিন বছর বয়সি ইলিশ পাওয়া গেছে। সারা দেশে এবার ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা যার ৪ লাখ মেট্রিক টন বরিশালে। এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইলিশ উৎপাদন হবে কেননা বিগত বছরের চেয়ে এবার নিষেধাজ্ঞায় প্রচুর ইলিশ ডিম ছেড়েছে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, গজারিয়া ও কীর্তনখোলা নদীতে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে সন্তোষজনক ডিম ছেড়েছে মা-ইলিশ।

বরিশালের নদীতে অভিযানে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ভাষানচর, বাগরজা, লেঙ্গুটিয়া পয়েন্ট, দড়ির চর, খাজুরিয়া, মাসকাটা নদী, তেঁতুলিয়া, মেঘনা, কীর্তনখোলার বেলতলা, চরবাড়িয়া, চরমোনাই পয়েন্ট, দপদপিয়া কালিজিরা পয়েন্টে প্রচুর ইলিশ ডিম ছাড়তে আসে। এসব নদীতে সার্বক্ষণিক নজরদারি হলে ইলিশ উৎপাদন আরো বেড়ে যেত। সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত চাল না পেয়ে অনেক জেলেরাই বাধ্য হয়ে নদীতে নেমেছেন। সঠিকভাবে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা সম্ভব হলে ও জেলেদের আরো সচেতন করতে পারলে আরো সুফল আসত।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ৮৩২টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২ হাজার ৮৬৫টি অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময়  ৮৫১টি মামলায় ৭১৬ জন জেলেকে কারাদণ্ড এবং ১৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/ইআ