বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞন সমিতির পক্ষ থেকে ডাক্তার আবু কামরান রাহুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ফিকামলি সেন্টার প্লাটিনাম জিমের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু কামরান রাহুল অল্প বয়সে এক সুযোগে মেডিসিনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি 'ডক্টর অফ মেডিসিন' (এমডি) অর্জন করায় এবং করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় অসামান্য অবদানের জন্য তাকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আ.ব.ম ফারুক।
প্রধান অতিথি বলেন, রোগীদের জন্য ডাক্তার হলো শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু মাঝেমধ্যে দেখতে পাই কিছু কিছু ডাক্তারদের ম্যাল প্র্যাকটিস। অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে বিশাল ফর্দ ধরিয়ে দেন রোগীদের হাতে। ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অনেক ডাক্তারদের কমিশন গ্রহণ, অখ্যাত ওষুধ কোম্পানির নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে মানহীন ওষুধ প্রেসক্রাইব করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। টাকা-পয়সার জন্য নয়, সেবার ব্রত নিয়ে এ পেশায় আসা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে মনোবিজ্ঞান গবেষক ড. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, চিকিৎসক সমাজের জন্য ডাক্তার রাহুল এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ডেঙ্গু ও করোনা ম্যানেজমেন্টে তার পারদর্শিতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। কম পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে স্বল্প খরচে কীভাবে রোগীকে সুস্থ করা যায়, এ যেন তার প্রতিদিনের মেধা ও মননের গবেষণা। কাছ থেকে দেখা, সে একজন মানবিক ডাক্তার, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শামসুদ্দীন ইলিয়াস বলেন, ডাক্তার আবু কামরান রাহুল শুধু একজন ভালো ডাক্তারই নয়, সে একজন ভালো মানুষও। রোগীদের প্রতি তার আচার-আচরণ, সঠিক রোগ শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসাসেবা প্রদানে তার পারদর্শিতা রোগীকে মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। এ দেশে রাহুলের মতো শত শত ডাক্তার পেলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত হবে, রোগীরা আস্থা ফিরে পাবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড.আজিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান, প্রফেসর মনিরুজ্জোহা, ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন, প্রফেসর যোগেন কুমার মন্ডল, প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ জামান পারভেজ, ডা. রাজীব হালদার, ডা. ইশতিয়াক আহমেদ, প্রফেসর মাসুদা বেগমসহ শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের খিলোগ্রামের কৃতি সন্তান ডা. আবু কামরান রাহুল। তার বাবা জামাল উদ্দিন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। রাহুল মানবিক ডাক্তার হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। করোনা মহামারির সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটে।
মাঝে-মধ্যে হেলিকপ্টারযোগে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা দিতে ছুটে যান ডাক্তার আবু কামরান রাহুল। এজন্য বন্ধুমহল ও নিজ এলাকায় 'হেলিকপ্টার ডাক্তার' নামেও বেশ পরিচিত।
সাধারণ চিন্তা-ভাবনার বাইরে গিয়ে অনেক জটিল রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করে গেছেন সফলভাবে। বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবিরাম পথচলায় আজ তাকে এনে দিয়েছে এত বড় অর্জন। এই অর্জনের পেছনে তিনি পরিবারের সকল সদস্য, সকল শিক্ষক এবং তার রোগীদের প্রতি কৃতিত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ড. আব্দুল ওয়াদুদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার রাহুল বলেন, আপাতদৃষ্টিতে বাবা-মায়ের টাকা মনে হলেও দেশের গরীব, দুখী মেহনতী মানুষসহ আপামর জনসাধারণের ট্যাক্সের পয়সা আমাদের পড়াশোনার পেছনে সরকারের খরচ হয়। তাই ধনী-গরিব সবাইকে একই দৃষ্টিতে অভিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অতীব প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগীরা বিরক্ত হয় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা হারায়।
ডা. রাহুল আরও বলেন, যেহতু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পেশাতে থাকবো, তাই এই মহান পেশাকে সবসময় সহিহ রাখবো, কোন প্রলোভনে কখনো আমার কলমকে বিক্রি করতে দেবো না।
ঢাকার ২২/২, সোনারগাঁও রোডস্থ হাতিরপুলে অবস্থিত ফিকামলি সেন্টারে তার নিজস্ব চেম্বারে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা রোগীদেরসেবা দিয়ে থাকেন। গরীব রোগীদের জন্য কোন ফি গ্রহণ করেন না রাহুল। গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করেন ফিকামলি সেন্টার-প্লাটিনাম জিমের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. আব্দুল ওয়াদুদ।
এছাড়া পিতা-মাতার নির্দেশ ও নিজের দায়বদ্ধতা থেকে প্রতি শুক্রবার ডা. রাহুল সিলেটে তার গ্রামের বাড়িতে যান রোগী দেখতে। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শাহগলি বাজারে এবং বিকেল ৩টা থেকে ৮টা চারখাই বাজারে রোগী দেখেন। ডাক্তার রাহুল ভবিষ্যতে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর গবেষণা করে এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে চান। গুণীভাজন এই চিকিৎসকের জন্য রইলো শুভকামনা।