কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে নদী, খাল-বিলে পানি কমে গেছে। এ সময়টাতে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে দলবেধে বাউত উৎসব চলছে।
ইতিমধ্যেই তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার গুমানি, বড়াল, গোহালা, ফুলজোড় ও ইছামতি নদীসহ চলনবিলের সগুনায় কাটাবাড়ি বিল ও গুমানী নদীর মোহনায় অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে বাউত উৎসব।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে চলনবিলের সগুনায় কাটাবাড়ি বিল ও গুমানী নদীর মোহনায় চলে বাউত উৎসব। এতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় ২ শতাধিক লোকজন অংশ নেন। আগামী ২ মাসজুড়ে চলনবিলের বিভিন্ন অঞ্চলে এই বাউত উৎসব চলবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চলনবিলে দেশীয় মাছের প্রাচুর্যের সুনাম বহু পুরোনো। এ কারণেই বিভিন্ন খোলা জলাশয়ে মাছ শিকার করতে আসতো লোকজন। তারা এটিকে জমিয়ে তুলতো উৎসবের আমেজে। আর তৎকালীন মাছ শিকারের এই উৎসবই স্থানীয়ভাবে এলাকার লোকজনের কাছে পলো বা বাউত উৎসব নামে পরিচিত বলে জানান কাটাবাড়ি বিলে মাছ শিকার করতে আসা ধামাইচ এলাকার মাছ আজিমুদ্দিন (৫৫)।
তিনি জানান, বাউত বা পলো উৎস এলাকার ঐতিহ্য। প্রতিবার এই সময়টাতে শুরু হয় উৎসব। তবে আগের মতো মাছ নেই।
কাটাবাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ সিরাজুল হক জানান, অতীতে তাড়াশ এলাকায় বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পরেই বিশেষ করে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে বা শীতের মধ্যে সকালে বিভিন্ন জলাশয়ে দলবদ্ধ হয়ে দিনক্ষণ ঠিক করা হয় বাউত উৎসবের। সে অনুযায়ী এলাকাবাসী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মাছ শিকার করতে আসেন। এতে উপকরণ হিসেবে পলো, বেড় জাল, হেসি জাল, ঠেলা জাল ও ধর্মজাল ব্যবহার করা হতো। তবে এখন পুরুষরাই এ কাজে মেতে ওঠে। আর বাড়িতে বউজি ও মেয়েরা অপেক্ষা করে মাছের জন্য। এখন আমেজ থাকলেও পর্যপ্ত সেই মাছ মেলে না।
তাড়াশ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক শফিউল হক বাবলু বলেন, অতীতে পলো বা বাউত উৎসব অনেক হলেও এখন তেমনি আর হয় না। বর্তমানে জলাশয় ভরাট, বিলের তলায় পলি জমে তা আবাদী জমিতে পরিণত হওয়াসহ নানা উপায়ে খাস সম্পত্তি দখল ও মালিকানায় রুপান্তরিত হয়েছে। ফলে পলো বা বাউত উৎসব করে মাছ শিকার করার স্থানও কমে এসেছে। এ জন্য সরকারের যথাযথ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।