মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আগামীর বাংলাদেশ ও তরুণদের প্রত্যাশা

আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:৩০

আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বে এখন আগ্রহ দেখা যায় বেশ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট স্বর্গতুল্য দেশটিকে। বাঙালি জাতি একটি সংগ্রামমুখর জাতি; এ জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, আছে ভাষা, আছে সুন্দর এক ভূখণ্ড। অর্থাৎ বলতে গেলে, পৃথিবীর একটি স্বর্গ আমাদের বাংলাদেশ! এই বাংলাদেশকে নিয়ে তরুণদের অপার স্বপ্ন। তরুণদের প্রত্যাশা, এই জনপদ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং সমৃদ্ধিশালী ও শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। 

বলা বাহুল্য, আজকে যে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাতে প্যাসিফিক-ভারত মহাসাগরীয় রাজনীতিতে বাংলাদেশের একটা অবস্থান থাকবেই। এই অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি উঠতি শক্তি। বাংলাদেশকে এখন নেক্সট ইলেভেনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, যে ১১টি রাষ্ট্র ভবিষ্যতে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও একটি! এ সংবাদ পরমানন্দের। 

উল্লেখ করার মতো বিষয়, এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) চ্যালেঞ্জ পূরণ করে বাংলাদেশ এখন সফট পাওয়ার খেতাব পাচ্ছে। এর বড় প্রমাণ হলো ২০১৯ সালে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ পাওয়া। বাংলাদেশ এখন অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ করছে নিজের অর্থ—এই সক্ষমতা গর্ব করার মতো। ৩০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু, রামপাল, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্প আমাদের সক্ষমতার জলজ্যান্ত উদাহরণ। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব উন্নয়ন তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে কতটা অবদান রাখবে? গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেভাবে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এই অবস্থায় দেশের ৭৮ শতাংশ তরুণ কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। এক কর্মসংস্থান কর্মসূচি জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ, যাদের অধিকাংশই ছাত্র!  ৮৪ শতাংশ ছাত্র মনে করে, দিনদিন এই বেকারত্ব  বাড়ছে। কী সাংঘাতিক!

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুযায়ী মজুরির বিনিময়ে সপ্তাহে এক ঘণ্টার কম কাজের সুযোগ পান, এমন মানুষকে বেকার বলে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের হার ২৭ লাখ, যার মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ৪ লাখ! বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রমবাজারে টিকে থাকতে হলে তরুণদের বেশ কিছু দক্ষতা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় তা থেকেও তরুণ সমাজ বঞ্চিত হচ্ছে। 

এমতাবস্থায়, তরুণদের চাওয়া হলো চাকরির বাজারে দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্য ইত্যাদি বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের উত্সাহ দিতে হবে। এছাড়া কোন ধরনের চাকরির জন্য কেমন যোগ্যতা দরকার, তা পৃথক করতে হবে। যেমন—সমুদ্র অর্থনীতিতে এখন জোর দিচ্ছেন অনেক তরুণ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য তরুণদের কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। আর এই লক্ষ্য পূরণে বেকারত্ব সবচেয়ে বড় বাধা। এই বেকারত্ব দূর হলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুফল মিলবে। এতে করে তরুণদের প্রত্যাশাও পূর্ণ হবে। তাই প্রত্যাশা পূরণে তরুণদের ওপর নজর দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা করতে হবে। তরুণদের প্রত্যাশা পূরণের ওপর জোর দিতে হবে। তা নাহলে, তরুণদের হতাশা দেশকে নিয়ে যাবে অন্ধকারের দিকে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন