শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্যয় ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা

নির্মাণের আট বছরেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার

আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:১৫

বাহুবলে নির্মাণের প্রায় আট বছর পরও স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর হয়নি ট্রমা সেন্টার। ভবনে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নিয়ে গণপূর্ত ও স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠি চালাচালিতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হওয়ায় অনেক অবকাঠামোই নষ্ট হয়ে গেছে। ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণকাজ বিগত ২০১৩ সালে সম্পন্ন হয়। এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন কমিটির মাসিক সমন্বয় সভায় ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট হস্তান্তর করে ট্রমা সেন্টার চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত ও দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২০১০ সালে ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বাহুবলে ট্রমা সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে ১০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। এতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভবনটি গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ না থাকায় সেটি গ্রহণ করতে রাজি হয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে দুই বিভাগের মধ্যে বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালিতেই কেটে গেছে আট বছর। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ একটু তৎপরতা দেখায়। তারপর আবার সবকিছু ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে। 
গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অগ্রগতি রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুতের ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২৬ মে ২০১৪ ও ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে দুইবার তাগিদপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অতিরিক্ত ৬ লাখ টাকা দাবি করায় হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। পরে এ ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

অন্য দিকে, ২০১৩ সালের ২৩ জুন গ্যাস সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট চেয়ে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিকে চিঠি দেন। ইতিমধ্যে সরকার সারা দেশে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে ট্রমা সেন্টারে গ্যাস সংযোগ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। জেলার মাধবপুর উপজেলা থেকে নবীগঞ্জ উপজেলার প্রান্ত সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার ব্যাপী মহাসড়ক রয়েছে। আর এ মহাসড়কে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহতদের প্রতিনিয়ত সিলেট অথবা ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু অনেকের পক্ষেই আর্থিক কারণে ঢাকা-সিলেট নিয়ে দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। বাহুবলে ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে এসব রোগী হাতের কাছে চিকিৎসা সেবা পাবে বলেই স্থানীয় লোকজন মনে করে। 

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বাবুল কুমার দাস জানান, ট্রমা সেন্টার হস্তান্তরের ব্যাপারে কিছু জটিলতা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী গণপূর্ত বিভাগ আমাদের নিকট হস্তান্তর করলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব।

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূরুল হক জানান, ইতিপূর্বে ট্রমা সেন্টারের অনেক কাজ বাকি রেখেই সেটি হবিগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ বাকি থাকায় তখন তা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। কিছু দিন পূর্বে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট ভবনের নকশা ও কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তা ব্যবহার করায় ভবনের অবকাঠামোগত কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এজন্য সম্প্রতি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে অবহিত করে অচিরেই চিঠি পাঠানো হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম