বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইজিপিপি প্রকল্পের কাজ শ্রমিকদের পরিবর্তে চলছে খননযন্ত্রে

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৪৩

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজ শ্রমিকদের দিয়ে করানোর বিধান রয়েছে। অথচ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় এ প্রকল্পে একটি গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের কাজ শ্রমিকদের না দিয়ে করা হচ্ছে খননযন্ত্রে (এক্সকাভেটর)। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমিকরাও কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ও শ্রমিকরা জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে কর্মহীন মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে প্রতি বছর সরকার শ্রমিকদের দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করিয়ে অর্থ দিয়ে থাকে। সরকারিভাবে এ প্রকল্পকে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) নাম দিলেও স্থানীয়ভাবে এটি ৪০ দিনের কর্মসূচি হিসেবে পরিচিত।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পে ৪০ দিনের কর্মসূচি শুরু হয় গত ২৬ নভেম্বর। রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪২টি প্রকল্পে মোট ১ হাজার ৪৪৭ জন শ্রমিকের এসব প্রকল্পে কাজ করার কথা। এ জন্য প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি দৈনিক ৪০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চর বংশী ইউনিয়নে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাওলাদার কাদ্দি কাঁচা রাস্তা (হাজিমারা দিদার কাদ্দি) নির্মাণ প্রকল্পে ২৫ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৩ ডিসেম্বর (সোমবার) প্রকল্পটিতে শ্রমিকের বদলে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলতে দেখা গেছে। ইতোমধ্যে রাস্তার পাশে নিচু ক্ষেত থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে রাস্তাটির প্রায় এক–তৃতীয়াংশ কাজ  হয়ে গেছে। এ কাজে একজন শ্রমিককেও কাজে লাগানো হয়নি।

এ প্রকল্পটির সভাপতি স্থানীয় দক্ষিণ চর বংশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাছিমা আক্তার। তার সঙ্গে প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিদার হোসেন মোল্লা।

এ বিষয়ে নাছিমা আক্তার জানান, তিনি ও দিদার মোল্লা যৌথভাবে কাজটি করাচ্ছেন। রাস্তাটির খেতের কিছু অংশে খননযন্ত্র দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। বাগানের অংশে শ্রমিক দিয়ে করাবেন। দুই দিন পর খননযন্ত্রটি আর ব্যবহার করবেন না। প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে ২৫ জন শ্রমিক দিয়ে রাস্তাটি করার কথা ছিল। তবে এই টাকায় বর্তমানে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চান না বলেও জানান তিনি।

দক্ষিণ চর বংশী ই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল সালেহ মিন্টু ফরাজী জানান, খননযন্ত্র দিয়ে প্রকল্পের কাজ করার বিষয়টি জানতেন না তিনি। তাছাড়া শ্রমিকের পরিবর্তে খননযন্ত্র ব্যবহার করার নিয়ম নেই। বিষয়টি খোঁজখবর নিব।

এব্যাপারে রায়পুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলিপ কুমার দে বলেন, শ্রমিকদের বদলে খননযন্ত্র দিয়ে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। শ্রমিকদের বদলে খননযন্ত্র দিয়ে কাজ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি খননযন্ত্র ব্যবহার করা হয় তবে এ বাবদ কোনো বিল দেওয়া হবে না। এছাড়া এবার শ্রমিকদের নামে নামে অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে।

ইত্তেফাক/আরএজে