শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শেরপুরে ‘মাছের মেলা’

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:২০

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা শুরু হয়েছে। ৩ দিন ব্যাপী মেলায় হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশীয় প্রজাতির তরতাজা মাছ কিনতে বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন ক্রেতারা ভিড় জমান। তারা কিনে নিয়ে যান মেলা থেকে পছন্দের মাছ।

করোনাভাইরাস ও ওমিক্রন সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গেল দুই বছর এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) থেকে বসতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। শুক্রবার রাতে মাছের মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাছের আড়ৎদাররা মাছ নিয়ে এসেছেন। মজুত করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় নানা জাতের মাছ। আছে বাঘাইড়, বোয়াল, আইড়, চিতল, কাতলা, রুই ইত্যাদি।

মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে জেলার শেরপুর এলাকায় বসে মাছের মেলা। এটি যদিও মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও মেলাকে কেন্দ্র করে মৎসব্যবসায়িরা প্রস্তুত করছেন বড় বড় দোকান। নানা ধরনের গৃহস্থালি ও বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনার পুতুল, টাট্টু ঘোড়া নিয়েও বসেছেন অসংখ্য দোকানি।

অপরদিকে কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও নানা জাতের বাসনকোসন ও আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কয়েকজন দোকানি। মেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামীকাল থেকে মেলায় ভিড় বাড়বে। শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলা। চলবে রবিবার বিকাল পর্যন্ত। মেলায় আসা নানা বয়সী লোকজন নিজেদের মুঠোফোনে মাছের সঙ্গে তুলছেন সেলফি। একসঙ্গে অদেখা নানা জাতের বড় বড় মাছ দেখে সবাই আনন্দিত। উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে কেনাবেচা। ঐতিহ্যবাহী এ মাছের মেলার আয়োজকরা জানান এবছর মেলায় প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ উঠেছে।

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. ওলিউর রহমান ও আড়তদাররা বলেন, মেলায় প্রথমদিন মধ্যরাত পর্যন্ত ১০-১২ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা শেষ দিন পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০ কোটি টাকার মাছ এখানে বেচাকেনা হবে। শুক্রবার রাতে দেখা গেল মাছের মেলায় মানুষের স্রোত। কুশিয়ারা নদীর তীরজুড়ে মাছের কয়েকশত দোকান।

মশিউর জানালেন, তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ, মাছটি যমুনা নদীর, মেলায় বিক্রির জন্য তিনি নিয়ে এসেছেন। বিক্রেতা মো. ইমরুন মিয়া প্রায় ২৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছের দাম চাইছেন ৫৫ হাজার টাকা আর ক্রেতারা দাম বলছেন ২৫ হাজার টাকা। ১৫ কেজি ওজনের কার্প (কারফু) মাছের দাম হাঁকছেন ৪৫ হাজার টাকা। বিক্রেতা খোকন মিয়া ও আলী হোসেন ৩০ কেজির বোয়াল ও ৪২ কেজি বাঘ মাছ দাম চাইছেন ৮৫ ও ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু ৪৫-৩০ হাজার টাকার ওপরে উঠছেন না ক্রেতারা। মাছ বিক্রেতা সুনামগঞ্জের শামসুদ্দিন জানালেন, ৩-৪ বছর থেকে তিনি মেলায় মাছ বিক্রি করছেন। নানা কারণে স্থানীয় নদী ও হাওরে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না।

মাছের মেলাটি এখন এ অঞ্চলের আনন্দ উৎসবের অন্যতম খোরাক। তাছাড়া অস্থায়ী গাড়ি পার্কিংয়ের স্টল বেশ ভালো আয় হয় তরুণদের। মেলাস্থল শেরপুর হলো মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার একেবারেই শেষভাগে। পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা উত্তরে কুশিয়ারা নদী। নদী পাড় পেরুলেই সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা। হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার এই তিনটি জেলার মোহনা হলো শেরপুর। মৎস্য ব্যবসায়ি আর স্থানীয়দের জোর দাবি এটিই দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা। যদিও মেলাটি এ অঞ্চলে মাছের মেলা নামে পরিচিত।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর মাছের মেলাতে যাতে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি না হয় সে জন্য তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। রয়েছে পুলিশি টহল। তাই গত বছরের মত এবছর মাছের মেলাতে জুয়া, পুতুল, অশ্লীল নৃত্য ও যাত্রা না থাকায় খুশি পুরো জেলাবাসি। মেলায় আগত দর্শক ও ক্রেতারা এ জন্য পুলিশ প্রশাসন ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন তাদের এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগের কারণে বছর কয়েকধরে মাছের মেলা তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে।

মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাওয়াদিঘি, হাইল হাওর ও মনু, ধলই, কুশিয়ারা নদীসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন হাওরের মাছের ওপর নির্ভর করে প্রতিবছরই বসে এ মেলা। মৎস্যজীবীরা এই মেলায় মাছ বিক্রির জন্য ৫ থেকে ৬ মাস আগে থেকেই বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। এই মাছগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় পানিতেই বাঁচিয়ে তাজা রাখা হয়। 

ইত্তেফাক/এআই