সম্প্রতি এসএসসি পাস করেছে রুমা (ছদ্মনাম)। উচ্চ শিক্ষার ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্র্যের জন্য বাবা মা চাইলেন বিয়ে দিতে। পাত্র ঠিক হলো। বিয়ের দিনক্ষণ পড়ে গেল। তবে পুরোটাই ঘটেছে রুমার অমতে। এ ঘটনা জানতে পারে ‘ঘাসফড়িং’ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ঠিক বিয়ের দিন রুমার বাড়িতে উপস্থিত হয় সংগঠনটির সদস্যরা। তাদের সহযোগিতায় বন্ধ হলো সেই বিয়ে।
ঘটনাটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের। বাল্যবিবাহ বন্ধ করে এমন অসংখ্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ‘ঘাসফড়িং’র প্রতিষ্ঠাতা সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র ১০০ উদীয়মান ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ছোঁয়ার জন্ম ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নে। ছোঁয়ার মা লিজা আক্তার বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছিলেন। তাই ছোট থেকেই চোখের সামনে বাল্য বিয়ের বিষফল দেখতে থাকেন ছোঁয়া। মায়ের সার্বক্ষণিক শারীরিক ও মানুষিক অসুস্থতা পীড়া দিয়ে যাচ্ছিল তাকে। একটু বড় হতেই দেখতে পেলেন সহপাঠীরাও বাল্যবিবাহের শিকার হতে যাচ্ছে। তখন রুখে দাঁড়ালেন ছোঁয়া। সাত সহপাঠীকে নিয়ে গঠন করলেন ‘ঘাসফড়িং’ সংগঠন। বাল্যবিয়ের ঘটনা কানে এলেই বন্ধু, শিক্ষক ও সহযোগীদের নিয়ে ছুটে যেতে শুরু করলেন। প্রয়োজনে সহযোগিতা চাইতেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।
ছোঁয়া বলেন, ‘ময়মনসিংহে আমার আশপাশে এক সময় বছরে ৪০-৫০টির মতো বাল্যবিয়ের ঘটনার কথা জেনে এসেছি। তবে এখন সেই সংখ্যা ২-৩টিতে নেমে এসেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে শতভাগ না হলেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছি।’
ছোঁয়ার গ্রাম ঝাউগড়াকে ইতোমধ্যে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছোঁয়ার যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিলো নাহ। বাল্যবিবাহ রোধ করতে গিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে বারবার পড়তে হয়েছে রোষানলে। তবে সব বাধা-বিপত্তি উতরে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন ছোঁয়া। এবছর বিবিসি চার বিভাগে বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর নাম প্রকাশ করেছে। সমাজ, সংস্কৃতি ও বিশ্বকে নতুনভাবে উদ্ভাবনে ভূমিকা পালন করা নারীদের নাম ওঠে এসেছে এ তালিকায়। অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তা বিভাগে স্থান পেয়েছেন সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। তার অবস্থান ২১তম।