করোনাকালে বেঁচে থাকার তাগিদে হাহাকার করেছে মানুষ। তেমন দুঃসময়েও কিছু মানুষ ছুটে এসেছে মানুষের পাশে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে, কেউ সংগঠনের ব্যানারে। অনেকে করোনার পর সরে গিয়েছিলেন, অনেকে ধরে রেখেছেন মানবসেবা। নিজেকে ও সংগঠনকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। আয়েশা আক্তার ইতি ধরে রাখাদের দলে। ২০২০ এর মার্চে তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় সামাজিক সংগঠন 'ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ আর্মি।'
লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি করোনায় কাজ করেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, শিশু খাদ্য সরবরাহ, ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ জরুরি প্রয়োজনে। ইয়ুথ আর্মির সদস্যরা করোনায় দেশের ১৪টি জেলায় সেবা পৌঁছে দিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে। বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপ শেষে ইয়ুথ আর্মি নজর দিয়েছে সমাজের সেসব সমস্যার দিকে, যা নিয়ে আজকের আধুনিক সমাজেও খুব বেশি কথা হয় না। বিশেষত প্রান্তিক অঞ্চলে, যেখানে এখনও মানুষ নানাবিধ সচেতনতার ব্যাপারে উদাসীন।
শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দুই বছর ধরে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে 'ব্রেক দ্য সাইলেন্স: আওয়ার সেইফ ওয়ার্ল্ড' নামক প্রকল্প। যার আওতায় গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮-১৬ বছর বয়সী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে এই সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে আলোচনা, আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মাঝে শিক্ষার্থীদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব তৈরি করার কাজ করা হয়। এছাড়া 'চায়ের কাপে সচেতনতা'- প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের বাজারে আড্ডারত পুরুষদের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং গ্রামীণ মায়েদের জন্য গৃহীত প্রকল্প 'সচেতনতায় সুরক্ষা'-র হাত ধরে নারী উন্নয়নে অবদান রাখতে কাজ করছে ইয়ুথ আর্মি।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আয়েশা আক্তার ইতি পড়াশোনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। দেশকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেন ইতি। এরই মধ্যে কাজ করেছেন বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে। সেইভ ইয়ুথ বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইয়ুথ সার্কিট, ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, এস্পায়ার ইন্সটিটিউটের মতো নামকরা সংস্থাগুলো তার কাজের পরিধি ও অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
২০২০ সালে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ আর্মি তাদের অসামান্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। সামনে থেকে দক্ষ হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইতি, ২০২১ সালে তিনি পেয়েছেন ব্যক্তিগত পুরস্কার ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড। সংগঠনের কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চাপের সমন্বয় কীভাবে ঘটান, জবাবে ইতি বলেন, 'একাডেমিক পড়াশোনা সবার আগে। দেশকে সেবা দিতে হলে আগে নিজেকে পরিপূর্ণ হতে হবে। আমার কাছে জীবনটা বাইসাইকেলের মতো, যা প্রতিনিয়ত ব্যালেন্স করে চলতে হবে বলেই মনে করি। অনেক সময় হয়তো কষ্ট হয়, তবে আফসোস নেই। আমি কাজ করি মানুষের জন্য। এসব কাজে ব্যস্ততাই আমাকে খুশির উপলক্ষ এনে দেয়।'