বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জামালপুরের হাড়িয়াবাড়ীতে কমিউনিটি ক্লিনিক

নিরাপদ প্রসব বেড়েছে ৪০ শতাংশ

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:০০

জামালপুর জেলার ইসমালপুর উপজেলার হাড়িয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা উম্মে হাবিবা শিখা (২০)। তিনি গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহে প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ চেকআপ করান। তিনি জানেন, ২৮ সপ্তাহে ২য়, ৩২ সপ্তাহে ৩য় এবং একবারে শেষ সময়ে আর একবার মেডিক্যাল চেকআপ করাতে হয়। শুধু তাই নয়, তিনি তার নবজাতক ও নিজের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা হাসপাতালে নিরাপদ প্রসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খাচ্ছেন পুষ্টিকর খাবার।

শুধু হাবিবা নন, দ্বিতীয় বারের মতো মা হতে যাওয়া আল্পনা আক্তার (২৫) জানান, তিনি এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নিয়মিত চেকআপসহ আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট গ্রহণসহ সব নির্দেশনা মেনে চলেছেন। আর অপেক্ষা করছেন হাসপাতালে দক্ষ হাতে সন্তান প্রসব করানোর। তার প্রথম সন্তানের জন্মের সময় এতটা সতর্ক ছিলেন না তিনি। বাড়িতেই তার সন্তান প্রসব হয়। স্থানীয়রা জানান, জামালপুরের ইসমালপুর উপজেলার হাড়িয়াবাড়ী গ্রামের প্রায় সব অন্তঃসত্ত্বা নারী এখন নিরাপদ প্রসবের সব নির্দেশনা মেনে চলেন। এতে গত চার/পাঁচ বছরে এলাকার নিরাপদ প্রসব বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এখন এলাকায় ৬০ শতাংশ গর্ভবতীর প্রসব দক্ষ হাতে নিরাপদে হয়। আর প্রায় সব নবজাতক জন্ম নেয় যথাযথ ওজন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে।

কীভাবে এই পরিবর্তন : ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ টু এনহ্যান্স নিউট্রিশন সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নেন্স বিয়ংস’ প্রকল্পের ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম নতুন করে গতি পায়, বলেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমুল আলম। তিনি বলেন, আগে দুটি রুমের একটি ক্লিনিক ছিল। সেভাবে প্রচারণা ছিল না। এখন সুন্দর অবকাঠামো আর কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারের মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে ভালোভাবে। আবার এলাকায় প্রচারণার জন্য দল গঠন করা হয়। ফলে বাড়তে থাকে রোগী। নতুন করে ক্লিনিকের কার্যক্রমের প্রচার প্রসারের ফলে অন্য ক্লিনিকগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে এখানে বেশি রোগী আসে। গর্ভবতীরা নিরাপদ গর্ভধারণের সব নির্দেশনা মেনে চলেন।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্লিনিকে ৩০ জন গর্ভবতী এবং ১১ জন প্রসূতি চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এ সময় প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসে ৩৫ জন কিশোরী। আর ২০২২ সালে এই ক্লিনিক থেকে ৪৫৮ জন গর্ভবতী ও ৭৫ জন প্রসূতি সেবা গ্রহণ করেন। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার লিপি বেগম বলেন, আমরা শিশু, বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোরী, গর্ভবতী ও প্রসূতিদের চিকিৎসা দেই। আগে খুব কম নারী সেবা গ্রহণ করত। আবার সেবাদানকারীও সব সময় পাওয়া যেত না। এখন সেবা গ্রহীতা বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এখন এলাকার ৬০ শতাংশ গর্ভবতী  প্রাতিষ্ঠানিক বা সদর হাসপাতালে দক্ষ হাতে সন্তান প্রসব করান। মুরুব্বিরা বাড়িতে প্রসব করাতে চাইলেও তারা বিরোধিতা করে হাসপাতালে যান। ফলে তারা নিরাপদে থাকে, সন্তানও সঠিক ওজন নিয়ে জন্মে। এর কারণ তারা পুষ্টিকর খাদ্যের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যসেবার নির্দেশনা মেনে চলেন। এখানে বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোরীরা পিরিয়ডের সময় একটা করে ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ট্যাবলেট খায় এবং স্যানিটারি নেপকিন ব্যবহার করে। তাদের পিরিয়ডকালীন জটিলতা থাকে না। এই কিশোরীরা যখন মা হয় তখন তাদের শিশুর ওজন ঠিক থাকে অর্থাৎ আড়াই কেজি হয়। পরিবর্তন দৃশ্যমান।

বিজ্ঞজনেরা যা বলেন : কমিউনিটি ক্লিনিকের পর্যবেক্ষক দলের সদস্য আবুবকর সিদ্দিকি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়ান এনজিও কো অপারেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহ-অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন বিয়ংস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, সঙ্গে আছে উন্নয়ন সংঘ। ২০১৮ সাল থেকে শেরপুর ও জামালপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় নারীকে মূলে রেখে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধ ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে কাজ করছে। এটি স্বনামধন্য ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা.এ বি এম আব্দুল্লাহর ক্লিনিক নামে পরিচিত। তাই তার জনপ্রিয়তাও এর পিছনে কাজ করে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে প্রান্তিক গর্ভবতী, প্রসূতি নারী, শিশু ও কিশোরীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পায় এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। ফলে হ্রাস পায় গর্ভবতী ও প্রসূতিসহ নবজাতক মৃত্যুর হার।

ইত্তেফাক/এমএএম