শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

শিয়রে বাঙালির প্রাণের বইমেলা

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:১২

স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। এই নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে বাংলা ভাষার জন্য বাঙালি তরুণ প্রাণের আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত বইমেলার নামকরণ ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার সম্প্রসারণ করা হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই দিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের বই। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করলেও এক মর্মান্তিক ঘটনার কারণে সে বছর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। পরে ১৯৮৪ সাল থেকে সাড়ম্বরে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। 

আপামর বাঙালির জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ, আগামীকাল থেকে শুরু হতে চলেছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান, শিশু চত্বর ৬৯টি এবং প্যাভেলিয়ন আছে ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান ও সর্বমোট ৭০৪টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে। মূল গেট থেকে ঢুকেই শিশু চত্বর পাওয়া যাবে। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন থাকবে। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।  

জেনে রাখা দরকার, ২০১০ সাল থেকে মেলার প্রবর্তক জনাব চিত্তরঞ্জন সাহার নামে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়। পূর্ববর্তী বছরে প্রকাশিত বইয়ের গুণমান বিচারে সেরা বইয়ের প্রকাশককে প্রদান করা হয় এই পুরস্কার। সর্বাধিক বই ক্রয়ের জন্য সেরা ক্রেতাকে দেয়া হয় ‘পলান সরকার পুরস্কার’। প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ এবং প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ নির্ধারিত আছে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য। এর বাইরে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’তো আছেই। 

বইপ্রেমী মানুষের জন্য প্রাণের মেলা এটি। দেখা যায়, যারা নিয়মিত বই পড়ে না তারাও মেলায় এসে খালি হাতে ফেরেন না। কেউ নিজে বই না পড়লেও প্রিয়জনকে উপহার দিতে ভোলেন না। শিশুরা বাবা-মার হাত ধরে বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে আসে। বিচিত্র ধরনের বই, বিচিত্র সব তথ্য—মেলায় না এলে অজানাই থেকে যায়! এছাড়া মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলাতে বিভিন্ন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ। মেলাতে লেখককুঞ্জে লেখকবৃন্দ উপস্থিত থেকে তাদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক ও দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। 

মেলায় আগতদের জন্য নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে ডিজিটাল বোর্ডসহ প্ল্যাকার্ড এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবারের বইমেলায়। সেখানে ম্যাপ থাকবে। থাকবে বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে অতীতের মতো এবারও অমর একুশে গ্রন্থমেলা জ্ঞানপিপাসু বাঙালির মনে-প্রাণে আনন্দ, উচ্ছ্বাস বয়ে আনবে বলেই প্রত্যাশা রইল।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন