মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

প্রশংসা করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৬

প্রশংসা করা নিয়ে গুণিজনরা বলেন, অন্যের তারিফ করা দারুণ একটি বিষয়। তারিফের মাধ্যমে অন্যের অন্তর্নিহিত শ্রেষ্ঠ বিষয়টিকে মহান-মহৎ করে তোলা যায়—যার বেশ ইতিবাচক দিক রয়েছে। মানতে হবে, আমরা প্রত্যেকেই সমস্যাবহুল পৃথিবী সাঁতরে বেড়াচ্ছি! প্রতিদিনের সমস্যাসংকুল পথচলায় ভালো কাজের প্রশংসা দারুণ কাজে দেয়। কাজে এনে দেয় গতি, করে অনুপ্রাণিত। একটুখানি প্রশংসা বা উত্সাহ সত্যিকার অর্থেই লক্ষ্য পূরণে দারুণ সহায়তা করতে পারে। এতে করে অন্যরা ভালো কাজে উত্সাহ পায়, মহৎ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার রসদ পায়। যেমন ধরুন, বাসে বা শ্রেণিকক্ষে কেউ আপনার জন্য একটা সিট ছেড়ে দিল, আপনার কমফোর্ট ও আপনার সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে তাকে অবশ্যই আপনার ‘ধন্যবাদ’ দেওয়া উচিত। শুধু মুখের কথায় নয়, চোখে মুখে হাসিতে কৃতজ্ঞতাটা প্রকাশ করা খুব বেশি করে দরকার। কারণ এই কাজটা করার পর আপনার কৃতজ্ঞতা পেয়ে যদি সে খুশি হয়, এই ভালো কাজটা সে রিপিট করবে এবং সে যতবার করবে, ততবারই তার ভালো লাগবে অন্যের চোখে নিজের জন্য সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখে। এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করার জন্য সবাই এগিয়ে আসবে। সবার মধ্যে জেগে উঠবে ইতিবাচক চেতনা।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক—আমাদের আশপাশে অনেক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ তথা স্বেচ্ছাসেবক আছেন, তারা কিন্তু সব সময় কোনো না কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য কাজ করে থাকেন। দেশ ও সমাজের জন্য ভালো ভূমিকা রাখেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই মানুষগুলোকে আমরা যৎসামান্য সম্মানটুকু দিতেও ভুলে যাই! অথচ আমরা যদি তাদের সামান্য সম্মানটুকু দেখাই, তাহলে তো এই মানুষগুলোর হাত ধরে প্রতিদিন একটি করে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হবে, তাই না? প্রতিদিন এত এত খারাপ সংবাদের মধ্যে যদি কিছু ভালো খবর পেতে হয়, তার জন্য দরকার—যারা ভালো কাজ করছেন, তাদের কথা বলা, তাদের তারিফ করা। 

যুগের চেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষ কিংবদন্তি কল্পবিজ্ঞান লেখক জুল ভার্ন বলেছেন, বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে না হলেও আমরা সবাই যার? যার অবস্থান থেকে স্বেচ্ছাসেবী—হোক সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য—আর এভাবেই প্রত্যেকে আমরা পরের তরে!’ 

সুতরাং, বলতেই হয়—ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ধন্যবাদ’টা শুধু মুখে বলবেন না কখনোই। ১০ সেকেন্ড বেশি খরচ করে চোখ, হাসি, অঙ্গভঙ্গিতে তাকে বোঝান—তিনি ভালো, মহৎ কাজ করেছেন। মনে রাখতে হবে, ভালো কাজের প্রশংসাও কিন্তু ভালোমতো ও মন দিয়ে করতে হয়। তাছাড়া প্রশংসা কিন্তু সম্পর্ক মজবুতও করে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ—বরং আনন্দিত হয়ে মিষ্টি হেসে বলুন, ‘ধন্যবাদ’। এতে প্রশংসাকারী খুশি হবেন। সত্যি বলতে, ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ বলা যেমন জরুরি, তেমনি কারোর ভালোকে প্রশংসা করাটাও অতি জরুরি।

কোনো সোশ্যাল ইস্যু নিয়ে আমাদের এত কিছু বলার থাকে, অথচ ভালো কাজ নিয়ে কথা বলতে গিয়েই কথা ফুরিয়ে যায়। এটা কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না কোনোভাবেই। বলা হয়, স্বীকৃতি বা প্রশংসা শুধু কাজে উত্সাহই বাড়িয়ে দেয় না, মানসিকভাবেও একজন মানুষকে করে শক্তিশালী। তাই অন্যের প্রশংসা করার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তাই ভালো কাজ করা, ভালো কাজের পাশে থাকা ও ভালো কাজ করা মানুষকে  সবার মধ্যে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিক ও সচেতন হতে হবে। প্রতিটি ভালো মানুষ ভালো থাক, প্রশংসা পাক! তাদের দিনগুলো সুন্দর হোক পুষ্পপল্লবের মতো—এই প্রত্যাশা করাই যায়। 

লেখক : শিক্ষার্থী, দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (বিজনেস লেভেল)

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন