জামালপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীর প্রতীক (বার) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় মরহুমের প্রথম জানাজা নামাজ বকশীগঞ্জ চন্দ্রাবাজ সরকার বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় শেরপুরের শ্রীবরদী সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। পরে তাকে শ্রীবরদী পৌর শহরের খামারীয়া পাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
জহুরুল হক মুন্সী বীর প্রতীক (বার) জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে শেরপুরের শ্রীবরদী পৌর শহরের খামারীয়া পাড়ায় বসবাস শুরু করেন।
১৯৭১ জামালপুর শহরে পাকিস্তানি হানাদারদের অবস্থানস্থলে হামলার প্রস্তুতি চলছিল। ৩১ বেলুচের প্রায় দেড় হাজার সেনা পিটিআই ক্যাম্পে স্থাপিত প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিল। শত্রুপক্ষের মনোভাব জানতে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন পাকিস্তানি অধিনায়কের কাছে। কিন্তু এ চিঠি নিয়ে কে যাবেন? জহুরুল হক মুন্সী তখন ভারতের পুরাখাসিয়া ক্যাম্পে ছিলেন। এ দায়িত্ব নিতে স্বেচ্ছায় রাজি হন তিনি।
৯ ডিসেম্বর তিনি সাদা পতাকা উড়িয়ে সাইকেলে চড়ে রওনা হন জামালপুরের দিকে। পিটিআই ক্যাম্পে যাওয়ার পথে পাকিস্তানি সেনারা তাকে আটক করে চোখ ও হাত বেঁধে নিয়ে যায় তাদের অধিনায়কের কাছে। চিঠি বহনের অপরাধে তার ওপর শুরু করেছিল নির্যাতন। এসএমজির বাঁটের আঘাতে মুন্সীর মুখের ওপরের পাটির চারটি দাঁত ভেঙে যায়। রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁর পা ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়। এরপর পাকিস্তানি অধিনায়ক ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ারের চিঠির জবাব লিখে সেই চিঠির ভেতর রাইফেলের গুলি ভরে মুন্সীকে ফেরত পাঠান। ওইদিনই গভীর রাতে মুন্সী পৌঁছান মিত্রবাহিনীর ক্যাম্পে। পরের দিন ১০ ডিসেম্বর ভোরে মিত্রবাহিনী জামালপুরের পাকিস্তানি ক্যাম্পে আঘাত হানে মুক্ত হয় জামালপুর।