শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

অচল পাবলিক লাইব্রেরি, নষ্ট হচ্ছে ১৮ হাজার বই

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:২২

জামালপুরের পাবলিক লাইব্রেরিতে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সরকারি বই। লাইব্রেরি কমিটির নিষ্ক্রিয়তায় প্রায় ৬ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৮ হাজার মূল্যবান বই নষ্ট হতে বসেছে। গত ২৯ জানুয়ারি সকালে পাবলিক লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও পাঠোপযোগী করে খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জামালপুরের সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন শাখা। 

বৃটিশ আমলে গড়ে ওঠা জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির নাম ছিলো করনেশন রিডিং ক্লাব। পাকিস্থান আমলে ১৯৫৯ সালে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি নামকরণ করে পৌর কার্যালয়ের একটি কক্ষে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৭৬ সালে ১৮ মে জেলা শহরের বকুলতলা কলেজ রোডে একতলা একটি পাকা ভবনে লাইব্রেরির কার্যক্রম চালু হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন শিক্ষক, কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সুধীজনসহ নানা পেশার মানুষ পরিচালনা করে আসছিলো। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক পাঠক আসতেন লাইব্রেরিতে। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে এ সময় দেশি-বিদেশি প্রায় ১৮ হাজার মূল্যবান বই ক্রয় করা হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, লাইব্রেরি চত্ত্বরে বইমেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে আধুনিকায়ন না হওয়ায় পাঠক সংখ্যা কমে বর্তমানে ২৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে । 

জানা যায়, লাইব্রেরিয়ান শ্যামল চন্দ্র দাস ও কর্মচারী দুদু মিয়া বিগত আট বছর ধরে মাসিক বেতন না পাওয়ার কারণে প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রেখে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যার কারণে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে লাইব্রেরির বই।

লাইব্রেরিয়ান শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। যেহেতু সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়া লাইব্রেরির একমাত্র আয়ের উৎস। এই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের মাসিক বেতন দেওয়া হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন,অনেক দিনের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রয়েছে। বিল পরিশোধ না করার কারণে বারবার বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য অনেক আগে থেকে লাইব্রেরির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। 

কর্মচারী দুদু মিয়া বলেন, প্রায় আট বছর ধরে মাসিক বেতন বাকি রয়েছে। তাই লাইব্রেরির দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি।

কবি সাযযাদ আনসারী বলেন, নানা কারণে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিটি এখন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। এক বছর আগে জেলা প্রশাসক একটি আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। কিন্তু সেই কমিটির তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। মূলত কমিটির নিষ্ক্রিয়তার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ লাইব্রেরিকে সচল করা এবং আধুনিকায়ন করে গড়ে তোলার দাবি জানান।
 
জামালপুর পৌরসভার মেয়র ও পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, পাবলিক লাইব্রেরিটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন জেলা প্রশাসক। তাই আমি ইচ্ছে করলেই উদ্যোগ নিতে পারি না। পুরোপুরি দায়িত্ব দিলে উদ্যোগ নিয়ে সচল করার ব্যবস্থা নেব।

লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, আগের জেলা প্রশাসকরা লাইব্রেরি নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে তা সঠিকভাবে সচল করা সম্ভব হয়নি। এখন  লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে সচল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে।

ইত্তেফাক/এবি/পিও