শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:০৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিজ এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে শান্ত কুমার রায় নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায়কে অভিযুক্ত করে নবীনগর থানায় মামলা হয়েছে।

অভিযুক্ত শান্ত কুমার রায় উপজেলার থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। সে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।  

অভিযোগে বলা হয়, শান্ত ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি নিজ এলাকায় সিগারেট কোম্পানির এজেন্ট ও সোনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো। চট্টগ্রামে তার বাবার একাধিক সোনার দোকান রয়েছে এলাকায় বলে বেড়াতো। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে এলাকাবাসী ও ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে শান্তর সঙ্গে লেনদেন ঠিকভাবেই চলছিলো। রবিবার অনেকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিলো। ওই দিনই শান্ত তার মোবাইল ফোনও বন্ধ করে পালিয়ে যায়। 

অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়। ছবি: ইত্তেফাক

জানা যায়, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা উপজেলার বাড়াইল এলাকার হক সাহেবের ৪০ লাখ, সুজন মিয়ার ২০ লাখ, আব্বাস উদ্দিনের ২০ লাখ ৬০ হাজার, সগির মিয়ার ১২লাখ, শ্যামল চন্দ্র দাসের ৮ লাখ ৬০ হাজার, অক্লান্ত দেবনাথের ৩ লাখ ও নিখলী এলাকার খোরশেদ আলমের ৫ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

এছাড়া থোল্লাকান্দি এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ৩৯ লাখ, আতিকুর রহমান রনির ৩ লাখ, মুক্তারামপুর এলাকার শাহ জালালের ৫৩ লাখ, ধরাভাঙ্গা এলাকার বাবলু মিয়ার ১১ লাখ, বাড়াইল এলাকার মাহফুজুর রহমানের ৩ লাখ, নরসিংদী জেলার মুরাদনগরের বাদল মিয়ার ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায়। 

সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রিফাত আহমেদের কাছ থেকে ৮ লাখ, বড়িকান্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেওয়ার কথা বলে জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। 

ভুক্তভোগী হক সাহেব জানান, শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে প্রায় সময়ই টাকা নিতো, আবার ফেরতও দিয়ে দিতো। সর্বশেষ ৪০ লাখ নিয়েছে এখন আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিতো এটা আগে জানা ছিলো না। এখন শুনতে পাচ্ছি আরও ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী সুজন মিয়া বলেন, শান্ত আমার বন্ধু ছিলো। তার বাবা চট্টগ্রামে সোনার ব্যবসা করে। স্বর্ণ কেনার কথা বলে কয়েক দিনের জন্য ২০ লাখ টাকা নিয়েছে। বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করে এই টাকা দিয়েছিলাম। শনিবার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। 

শাহ জালাল বলেন, বিকাশের ব্যবসা করি। সোনার চালান এসেছে বলে ৫৩ লাখ টাকা নিয়েছে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমে। 

ভুক্তভোগীদের অনেকের ধারণা, শান্ত চোরাই পথে ভারতে পালিয়ে গেছে। টাকা নেওয়ার সময় সে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আবার অনেকে ডকুমেন্ট ছাড়াই বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছে।

নবীনগর থানার ওসি সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, মঙ্গলবার রাতে নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এবি/পিও