মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ও মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ-দর্শনা সড়কে থাকছে না আর কোনো গাছ। সড়ক উন্নয়নের জন্য ঐ দুই সড়কে ২ হাজার ৭৮৬টি গাছে কুড়ালের কোপ পড়তে শুরু করেছে। এসব গাছগুলো কাটার পর সড়ক দুটি গাছশূন্য সড়কে পরিণত হবে।
এর আগে দফায় দফায় বিভিন্ন সড়কে গাছ কেটে নেওয়ায় সড়কপথে গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে যায়। শুধু সড়ক বিভাগের নয়, জেলা পরিষদের অনেক গাছ কাটা পড়েছে বৈধ ও অবৈধভাবে। সড়ক হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সড়কের দুই পাশের গাছের মালিকানা দাবি জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের। এ নিয়ে তিন বিভাগের মধ্যে বিরোধও আছে। আছে আদালতে মামলা।
কয়েক বছর আগেও সড়কে ব্রিটিশ শাসনামলের বড় বড় মেহগনি, শিশু, কড়াই, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন গাছ ছিল। যার একটা অংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, বিদ্যুতের খাম্বা স্থানান্তরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেহেরপুর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো. লি. (ওজোপাডিকো) মেহেরপুরকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
জানা যায়, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক ৪ লেনের আওতায় আসায় ৬৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। চার লেনে সড়ক সম্প্রসারণ কাজের জন্য এসব গাছ কাটতে হচ্ছে। এর মধ্যে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে জেলা শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে গোপালপুর পর্যন্ত ৫২টি লটে ৫৪৭টি গাছ ৫৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকায়, গাংনী উপজেলায় বাউট থেকে খলিসাকুণ্ডি পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ গাছ ২৮ লাখ ১২ হাজার টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করেছে বন বিভাগ। ইতিমধ্যে ঐসব গাছে কুড়ালের কোপ পড়তে শুরু করেছে। জেলা পরিষদ মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজার থেকে দর্শনা সড়কের ১৩৯টি গাছের দরপত্র আহ্বান করেছে।
মেহেরপুর ছহিউদ্দীন ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রেজা বলেন, সভ্যতার বিকাশের প্রভাব প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর পড়ছে প্রতিনিয়ত। গাছ কাটার কারণে বিশুদ্ধ অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হবো। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিকল্পনামাফিক প্রচুর পরিমাণে পুনরায় গাছ লাগাতে হবে।
মেহেরপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসটি হামিম হায়দার জানান, নগরবিদদের পরামর্শে এসব গাছ লাগানো হলে সড়ক সম্প্রসারণে বাঁধা হতো না গাছ। তবে দরপত্রের ১০ শতাংশ অর্থ পুনরায় গাছ লাগানোর জন্য বরাদ্দ থাকে। সড়ক নির্মাণ শেষ হলেই পুনরায় গাছ লাগানো হবে।
মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় বিদ্যুৎ বিভাগ খাম্বা বসায়। বন বিভাগ এবং জেলা পরিষদও সড়কের শেষ সীমানাতে গাছ না লাগানোয় এখন সড়ক সম্প্রারণ কাজে বৈদ্যুতিক খাম্বা ও গাছ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ খাম্বা সরিয়ে নিতে ওজোপাডিকোকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় গাছ লাগানো হলে পরিবেশের প্রয়োজনে গাছগুলো কাটতে হতো না বলেও জানান তিনি।