শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

দুর্গম পথের অভিযাত্রী ইকরামুল হাসান শাকিল

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১১:১২

'ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল পত্রিকার পাতায় বড় অক্ষরে ছাপা হবে আমার নাম। কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। সেজন্য প্রয়োজন ভিন্ন কিছু করার। তাই প্রথমে নিজ এলেকায় ধূমপানের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে শুরু করেছিলাম। কিছুদিন নাট্যদলেও কাজ করেছি। এরপর পর্বতারোহণের ভূতটা চেপে বসল।' এভাবেই বলতে শুরু করেন নেপালের ‘গ্রেট হিমালয়ান ট্রেইল’ থেকে সদ্য ঘুরে আসা বাংলাদেশি  তরুণ অভিযাত্রী ইকরামুল হাসান শাকিল।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১৯৯৪ সালে জন্ম নেওয়া শাকিলের মাধ্যমিকের সীমা পার হতে হয় জনতা উচ্চবিদ্যালয় থেকে। এরপর ভর্তি হন উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেখানকার শিক্ষাগ্রহণ শেষে যুক্ত হন ‘বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব’-এ। পর্বতারোহণের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে এম এ মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো যাত্রা করেন কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গে। সফল এ অভিযানের পর ২০১৭ সালে বেরিয়ে পড়েন ৬ হাজার ২৪৯ মিটার উচ্চতার লারকে পর্বত শিখর অভিমুখে। তবে এবারে ভাগ্য পুরোটা সহায় ছিল না। পর্বতের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছানোর আগেই আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে ওঠে। কোনোক্রমেই আর সামনে এগুনো সম্ভব হলো না। তাই মিশন অসম্পূর্ণ রেখেই নেমে আসতে হয় মাটিতে। তবে এ বিরূপ যাত্রায় উদ্যম হারাননি শাকিল। ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে অধিকতর প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৯ সালে আবার বেরিয়ে পড়েন পর্বত গিরির দুর্গম পথে। পাঁচ দেশের আট পর্বতারোহীর এক দলের সাথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমলুংয়ের চূড়ায় পা রাখেন। প্রশিক্ষণকালেই জয় করেন  ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ।

এবার স্বপ্ন হলো আরো বিস্তৃত। লক্ষ্য স্থির করলেন জয় করবেন হিমালয়ের ‘গ্রেট হিমালয় ট্রেইল’ অংশ। হিমালয় পর্বতমালার মধ্য দিয়ে নেপালের পূর্ব থেকে পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ার ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুর্গম এ  পথটিকে বলা হয় ‘গ্রেট হিমালয় ট্রেইল’। পৃথিবীর মাত্র ৩২ জন অভিযাত্রী এ পথে সফলভাবে যাত্রা করেছেন। শাকিলের ১৫০ দিনের দীর্ঘ অভিযানটি শুরু হয় গত বছরের জুলাই মাসে। পহেলা আগস্ট হিলশা থেকে মূল অভিযান শুরু করে হোমলা জেলার ইয়ারি, তুমকোট, মোছু, তাপলুং, কেরমি, ধারাপুরি, সিমিকোট পার হয়ে পৌঁছে যান মোগু জেলায়। এরপর  বাংলাদেশ নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ নেপাল ফ্রেন্ডশিপ অভিযানে ২টি পর্বত সফলভাবে আরোহণ  করেন শাকিল। ৪১ দিনের এ ট্রাকিং শেষে আবার গ্রেট হিমালয়ান ট্রেইলের মানাসলু সার্কিট অংশে ফিরে আসেন তিনি এবং রুবি ভ্যালি শেষ করে পৌঁছে যান ল্যাংটাং অঞ্চলে। ইত্তেফাক প্রজন্মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাকিল বলেন, ‘নেপালের সব থেকে দুর্গম ও বিপজ্জনক এ পথে ১৮টি কঠিন পর্বত পাড়ি দিয়েছি। যেগুলোর অনেকটির উচ্চতা ৫ হাজার মিটারের উপরে। এ  যাত্রায় আমাকে নানা প্রতিকূলতা পোহাতে হয়েছে। আমার কোনো সঙ্গী ছিল না, একাই হেঁটেছি। কয়েকবার পথ হারিয়ে আটকে থেকেছি, শীলাপ্রপাতের মধ্যে পড়েছি, বরফগলা হিমশীতল নদী পার হয়েছি। দু-একবার মৃত্যুর হাত থেকেও ফিরে এসেছি।’

শাকিলের পুরো অভিযানটা এখনো শেষ হয়নি অবশ্য। ভিসার মেয়াদ ও অর্থ শেষ হওয়ায় এক-তৃতীয় অংশ পথ বাকি রেখে দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। অর্থের সংস্থান হলেই আবার বেরিয়ে পড়বেন অসম্পূর্ণ পথ পাড়ি দিতে। শাকিল তার পর্বত আহরণের রোমাঞ্চকর গল্প নিয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই। তৈরি করেছেন পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বিভিন্ন সময়ে নাটক ও টিভি অনুষ্ঠানেও কাজ করতে দেখা যায় তাকে।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন