শিল্প এলাকায় আগুন নির্বাপণে পানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। শর্ত রয়েছে প্রতিটি শিল্পকারখানায় পানির রিজার্ভার বা ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকতে হবে। কিন্তু এই নিয়ম কারখানাগুলোতে মানা হচ্ছে না। শিল্পকারখানার আশপাশে স্থানীয়ভাবে পানির উত্সগুলো গরমের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানি সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে শিল্প এলাকায় পানির উৎস সংকট বিরাজ করছে। কারখানায় পানির নিজস্ব ব্যবস্থা নেই। এতে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হলে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। ফলে আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী উপজেলাসহ শিল্প এলাকাগুলোতে পানির উেসর চরম সংকট বিরাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, শিল্পকারখানার ধরন অনুযায়ী পানির রিজার্ভার ও ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় সময়ে পানি সংগ্রহ করা যায়। সীতাকুণ্ড এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। আশপাশের এলাকায় গরমের কারণে পুকুর খালে পানি শুকিয়ে গেছে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত ভূগর্ভস্থ পানির সংকট বিরাজ করছে। এখানে অনেক গভীরে গিয়ে পানি মিলছে না। গরমের মৌসুম হওয়ায় এসব এলাকায় পুকুর, ডোবাগুলোও শুকিয়ে গেছে। সীতাকুণ্ড ও কুমিরা এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি স্টেশন রয়েছে। তাদের দুটি পুকুর রয়েছে। যেখান থেকে আগুন নির্বাপণের জন্য পানি ব্যবহার করেন। এখন গরমের কারণে পুকুরগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসকে আশপাশের এলাকা থেকে পানি খুঁজতে হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ড এলাকায় তিন শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। কারখানায় পানির রিজার্ভার থাকা ফায়ার সার্ভিসের শর্ত রয়েছে। শিল্পকারখানার লাইসেন্স অনুমোদনের সময় রিজার্ভার থাকা শর্তে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ শিল্পকারখানায় পানির রিজার্ভার নেই। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসকে বাইর থেকে পানি ব্যবহার করতে হয়। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে তুলার গুদামে আগুন নির্বাপণ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে পানির সংকটে পড়তে হয়। পানি সংকটের কারণে আগুন নির্বাপণ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়।
কুমিরা ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, আমাদের পানিবাহী গাড়ি আছে একটি। এটিতে প্রায় ৬ হাজার লিটার পানি পরিবহন করা যায়। আমাদের স্টেশনের ভেতরে নিজস্ব পুকুরটিও গরমের কারণে প্রায় শুকিয়ে গেছে। এখন গরমের মৌসুম হওয়ায় এলাকার পুকুর ও ডোবাগুলোতে পানি কমে গেছে। এতে বড় দুর্ঘটনা হলে পানি নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। শর্ত থাকলেও অধিকাংশ শিল্পকারখানায় কোনো পানির রিজার্ভার নেই।’ সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল বলেন, সীতাকুণ্ডে শিল্প এলাকায় আগুন নির্বাপণে পানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের সাড়ে ৬ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার একটি পানিবাহী গাড়ি রয়েছে। ২০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার একটি পানিবাহী গাড়ির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।’
চট্টগ্রামে পতেঙ্গা, কালুরঘাট, সাগরিকা ও নাসিরাবাদ এলাকায় শিল্প অঞ্চল রয়েছে। এসব শিল্প এলাকায় রয়েছে হাজারো ছোট বড় শিল্পকারখানা। এখানে প্রায় সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শিল্প এলাকাগুলোতে পানির উৎসের ব্যবস্থা নেই। এতে বাইর থেকে পানি নিয়ে আগুন নিভানোর কাজ করতে হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেলে তাদের আশপাশের এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কর্ণফুলী উপজেলা এলাকায় কয়েক শ শিল্পকারখানা রয়েছে। এখানেও স্থানীয়ভাবে পানির সংকট বিরাজ করছে। শিল্পকারখানায় পানির রিজার্ভার নেই। কর্ণফুলী উপজেলায় ফায়ার সার্ভিসের কোনো স্টেশন নেই। তবে একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণকাজ চলছে। পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, শিল্পকারখানায় রিজার্ভার না থাকলেও ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। যাতে দুর্ঘটনার সময় আশপাশের পুকুর বা জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করা যায়। হাইড্রেন্ট পরিচালনার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিজস্বভাবে প্রশিক্ষিত জনবল রাখতে হয়।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, নগরীতে আগে অনেক পুকুর ছিল। এখন পুকুরগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে নগরীতে অগ্নিকাণ্ডের সময় স্থানীয় উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি স্টেশন রয়েছে। প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে গাড়ি রয়েছে। পানিবাহী গাড়ি রয়েছে একটি। প্রতিটি স্টেশনের পানির রিজার্ভার রয়েছে।