রোববার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ১২ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

সন্তানের সুস্থ ও সুন্দর বিকাশে 'গুড প্যারেন্টিং'

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৯

আমাদের দেশে কোনো কোনো বাবা মা সন্তানের শুধু মাত্র স্বাস্থ্য ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করেন। আবার কেউ কেউ শুধু সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে অতি ব্যস্ত থাকেন। যেমন, সকালে টিচার, সারাদিন স্কুল, বিকেলে কোচিং, রাতে আরেক টিচার ইত্যাদি। অনেকে আবার সন্তানের কোনো বিষয়েরই খোঁজ-খবর নেন না, কিন্তু পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলেই শুরু করেন মারধর, শাস্তি ইত্যাদি।  এ সত্ত্বেও সকল বাবা মা মনে করেন তারা ’সন্তানের ভাল চান’! তারা সন্তানকে খুব ভালোবাসেন! অথচ একজন আদর্শ বাবা মায়ের বৈশিষ্ট্য কখনোই এমন হতে পারে না।

সন্তানের সুস্থ ও সুন্দর বিকাশে  'গুড প্যারেন্টিং' এর কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক নাসরিন তানিয়া। চলুন জেনে নেই সে সম্পর্কে: 

খেয়াল রাখতে হবে স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া সন্তানের মাঝে বুদ্ধির পরিপক্কতা কম থাকবে এটাই স্বভাবিক। অপরিনত বয়সের কারনে তারা অনেক ভুল কাজ করে ফেলে তাই বলে তাদের সাথে রেগে গিয়ে বা ধৈর্য হারিয়ে নয় বরং ভেবে-চিন্তে, ধীরে-সুস্থে এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে। তাদের ভুল গুলোকে বুঝাতে হবে, বুঝতে সাহায্য করতে হবে।

জগতের প্রায় সবকিছু সম্পর্কেই শিশু আমাদের কাছ থেকে জানতে ও শিখতে চাইবে। একবারেই তো আর সবটা জানানো যাবে না, জানাতে হবে ধাপে ধাপে। এই ধাপগুলো নির্ধারণের সময় কোনোক্রমেই তাকে দোষারোপ করে বা লজ্জা দিয়ে তা করা যাবে না। এটা করতে হবে শক্তভাবেই, তবে তার মর্যাদা রক্ষা করে।

যে শিশু কিছুদিন আগেও তার মা বাবাকে  না দেখলে চিৎকার করে কাঁদত অথচ বেড়ে ওঠার  সঙ্গে  অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করার কারনে তারা তেমনটি আর করেনা। এতে বিচলিত না হয়ে সে  সম্পর্কে জানুন ও তাদের সঙ্গে ধাপগুলো অনুযায়ী  পিতামাতার আচরণেও পরিবর্তন আনা জরুরি।

শিশুদের বাড়তি যত্নের দরকার, সেটা সবাই জানি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাড়তি কোনো মনযোগ  না দেওয়াই শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল। তবে, কীসে তার বাড়তি যত্ন দরকার আর কীসে দরকার নেই– সেটা বুঝতে তার ব্যক্তিত্ব ও মেজাজ-মর্জি অনুযায়ী। হোঁচট বা আছাড় খেয়ে তা সামলে নিতে সচেষ্ট শিশুকে বাড়তি মনোযোগ দেওয়াটা জরুরি নয়। এটা তাৎক্ষণিকভাবে অবহেলা করাই যায়। কিন্তু সেই একই শিশু যদি বিদ্যুৎ চমকানি বা তেলাপোকা দেখে ভয় পায়, তখন সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া জরুরি। এটা অবহেলা করা অনুচিত।

শিশুদের নিজের ইচ্ছামতো  খেলতে দিলে এটা তাদের সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।

শিশুরা চায়, বড়রা তাদের কথাগুলো আগে শুনুক। আপনি যদি মনযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনেন, তাহলে দেখবেন, তারা সমস্যা না বরং নানা সমাধানই দিচ্ছে নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য। এটা হয়, কারণ শিশুরাও তাদের সমস্যা নিয়ে ভাবে, সমাধান খোঁজে। কিন্তু সেটা করার জন্য বড়দের কাছ থেকে উৎসাহ না পেলে তারা নিজ থেকে খুব বেশি এগোয় না। জটিল পরিস্থিতিতে আপনাকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সরল পরিস্থিতিগুলো তাকেই সমাধান করতে দিন।

যদিও এটা ঠিক যে আপনার অন্যসব পরিচয়ের চেয়ে সন্তানের মা বা বাবার পরিচয়টি আপনার কাছে অনেক বেশি আবেগময় অথবা সবচেয়ে পছন্দের। কিন্তু এটা বয়ে বেড়ানো তার ও আপনার উভয়ের জন্যই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। আপনি যদি আপনার অন্য পরিচয়গুলোও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পারেন, সেটা আপনাদের উভয়ের জন্যেই অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে।

আমরা শিশুদের যতটা মনোযোগী বা কল্পনাশক্তিসম্পন্ন বলে ধারণা করি, তারা তার চেয়েও ঢের ক্ষমতা রাখে। তাই আপনি কী বলছেন, তা থেকে তারা বেশি লক্ষ্য করে আপনি সেসব নিজে কতটা মানছেন– সেদিকে।

ইত্তেফাক/পিএস/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন