সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বগুড়া বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

বিশেষায়িত হয়েও ৬ দশকে নিয়োগ হয়নি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭:১৫

বগুড়ায় বক্ষব্যাধি চিকিৎসার জন্য ১৯৬১ সালে নির্মিত বিশেষায়িত হাসপাতালের ৬ দশক পার হলেও এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই চলছে একজন মাত্র মেডিকেল অফিসার দিয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংকট। বাধ্য না হলে কেউ আর এ হাসপাতালে যায় না।

এমনকি ওই হাসপাতালে সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষারও কোনো সুযোগ নেই। ওয়ার্ডবয়, বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ ৮টি পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলছে সরকারি এই হাসপাতাল।  

জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে বগুড়ায় অনেক বিড়ি কারখানা ছিল। ফলে জেলায় বক্ষব্যাধির রোগীও ছিল অনেক বেশি। এসব রোগীর চিকিৎসার জন্যই শহরের নিশিন্দারা এলাকায় ১৯৬১ সালে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর আগে ৫ কিলোমিটার দূরে শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় নির্মাণ করা হয় বক্ষব্যাধি ক্লিনিক। যা এখন বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তখন থেকে হাসপাতাল ও ক্লিনিক আলাদাই রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার সময় দু’জন মেডিকেল অফিসারসহ ২১ জনের পদ সৃষ্টি করা হয়। এতদিন পরও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসকের সংখ্যা। বরং বর্তমানে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। তাকেও পাওয়া যায় শুধু দিনের বেলায়। ফলে এ হাসপাতালে চিকিৎসায় নার্সই একমাত্র ভরসা। কিন্তু হাসপাতালের ৮ নার্সের ৫ জনই আছে উচ্চতর প্রশিক্ষণে। ওয়ার্ডবয়, বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ শূন্যপদ এখন ৭টি। নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে সরকারি এই হাসপাতাল। ২০০৮ সাল থেকে হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে অকজো অবস্থায় পড়ে আছে। 

বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, বগুড়া

ভুক্তভোগী রোগীরা অভিযোগ করেন, আগে এক সময় গড়ে ২৫-৩০ জন রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকতো এই হাসপাতালে। এখন ভর্তি হতে ভয় পায় মানুষ। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। কফ পরীক্ষা ফ্রি করা যাচ্ছে। কিন্তু ডায়াবেটিস ও এক্সরে পরীক্ষা দিলে অন্য কোথাও যেতে হয়। 

তারা আরও অভিযোগ করেন, ভর্তি হতে হলে যেতে হয় শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। দু’টি বিভাগ চালু থাকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। ডাক্তার দেখানো, কফ পরীক্ষা, এক্সরে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা সব করতেই আড়াইটা বেজে যায়। এরপর ৫ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে যেতে ৩টা বেজে যায়।

হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী বলেন, ডাক্তার না থাকায় রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে ১০-১২ জন রোগী থাকে। নার্স, ওয়ার্ড বয়ের পদ ফাঁকা। বাবুর্চি না থাকায় রোগীর জন্য রান্নার কাজ করেন মশালচি।

হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এসব বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। 

বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. শফিউল আযম বলেন, হাসপাতালের শুরুতে যেসব পদ দেওয়া ছিল তা পরে আর বাড়েনি। বিশেষায়িত হাসপাতাল বলা হলেও এটা আসলে পৃথক হাসপাতাল। যক্ষা ধরা পড়ার পরেই এখানে রোগী ভর্তি করা হয়।  বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

 

 

ইত্তেফাক/এবি/পিও