শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৪৭

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়া চলিয়াছে। ইহার মূল কারণ আমাদের সার্বিক বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলার জন্য আমরা কমবেশি সকলেই দায়ী। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও লক্ষণীয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে ওভার স্পিড, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, গাড়িচালকের অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, খানাখন্দে পূর্ণ রাস্তা ইত্যাদির কথা আমরা বহুবার উল্লেখ করিয়াছি। এখানে নূতন করিয়া কিছু বলিবার নাই। তবে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ যে রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভাব তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। আর কিছুদিন পরই ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে শহরাঞ্চল হইতে গ্রামমুখী মানুষের স্রোত পরিলক্ষিত হইবে। এই সময় আমরা যদি সতর্কতা অবলম্বন না করি, তাহা হইলে প্রতি বত্সরের ন্যায় এই বৎসরও ঈদযাত্রা হইবে ঝুঁকিপূর্ণ। গত বৎসর ঈদুল আজহার সময় শেষ সাত বৎসরের মধ্যে সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ইহার জন্য রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভাবই বহুলাংশে দায়ী। বিশেষ করিয়া ঈদযাত্রার সময় মহাসড়কগুলিতে ত্রুটিপূর্ণ বাঁক ও অবৈধ বিলবোর্ডের কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা বাড়িয়া গেলেও বিষয়টি সমাধানের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হইতেছে না।

আমরা জানি, সমগ্র দেশে সড়ক ও মহাসড়কে অন্তত ৮৫০ দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক রহিয়াছে। উদ্বেগের বিষয় হইল, অনেক বাঁকে আবার নাই সাইন-সিম্বল। সংকেতহীন এই সকল বাঁকে যখন দূরপাল্লা, মাঝারিপাল্লাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চাপ বাড়ে, তখন দুর্ঘটনার হার বাড়িয়া যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে বাঁক রহিয়াছে ২৪৮টি। ইহার মধ্যে প্রায় ১০০ বাঁক অতি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই বাঁকের অনেক পয়েন্টে রহিয়াছে বিলবোর্ড। আর এই সকল বিলবোর্ডের ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই কোনো বৈধতা নাই। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সড়কের  ধারে বিলবোর্ড স্থাপনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রহিয়াছে। ইহাতে বলা হইয়াছে, মহাসড়কের বাঁকের ভিতরের দিকে, কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) এলাকার ভিতরে, ফুটওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, বহুতল ভবন ও চলাচলে দৃষ্টিভ্রম হয়, এমন কোনো ভবনের উপর, সড়কের দুই ধারে কিংবা আড়াআড়িভাবে কোনো বিলবোর্ড স্থাপন করা যাইবে না; কিন্তু অহরহ এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিতেছে। সড়ক-মহাসড়কের বাঁকগুলিতে এমন আড়াআড়িভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করা হইতেছে, যাহা চালকের দৃষ্টিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলিয়া দিতেছে। ইহাতে বিপরীত দিক হইতে আসা গাড়ি সহসা চোখে পড়িতেছে না। আবার পিছনের দ্রুতগামী গাড়ি বাঁক ঘুরাইতে গিয়া একটু বেখেয়াল হইলেই অন্য গাড়িকে ধাক্কা দিতেছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ভূমি দখল করিয়া যেইভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়িয়া তোলা হইতেছে তাহাও বিপজ্জনক। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে যে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা গ্রহণ করা হয়, তাহাতে সওজের আওতাধীন রাস্তার ধারের জমির বেদখল রোধ, বিলবোর্ড স্থাপন ও ভূমি ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছে। এই বিধিমালা কেন লঙ্ঘন করা হইবে? আসন্ন ঈদযাত্রা উপলক্ষ্যে সড়ক-মহাসড়কের বাঁকে বাঁকে এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় সাইন-সিম্বল স্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখন হইতেই কার্যকর পদক্ষেপ লইতে হইবে। ইহার সহিত বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজও ত্বরান্বিত করিতে হইবে। রাত্রিবেলা মোটরগাড়ির হেডলাইটের রিফ্লেকশনে চালকের যাহাতে দৃষ্টিভ্রম না হয়, সেই দিকে দিতে হইবে বিশেষ নজর।

আমাদের দেশে মহাসড়ক রহিয়াছে অন্তত ২১ হাজার কিলোমিটারের অধিক। ইহার মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৮১২ কিলোমিটার। আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২৪৬ কিলোমিটার। আর জেলার সংযোগে মহাসড়ক রহিয়াছে ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার। এই সকল মহাসড়ক নিরাপদ করিতে হইলে হাইওয়ে পুলিশের টহল জোরদার করিতে হইবে। ইহা ছাড়া মহাসড়কের নিরাপত্তায় দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণে স্পিডমিটার কার্যক্রম গতিশীল করা, পর্যাপ্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, কনট্রোল রুমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং, হাইওয়ে পুলিশের অ্যাম্বুলেন্স বা ফার্স্ট এইড-সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে।

 

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন