শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ক্যাম্পাসের সামনে শিক্ষার্থী ফাহাদের জুসের দোকান

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:১৪

হোটেলে কাজ করার মাধ্যমে শুরু। এরপর অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে লোকলজ্জার ভয়কে পদদলিত করে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ক্যাম্পাসের সামনে দিয়েছেন ফলের জুসের দোকান।

বলছি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবরার ফাহাদের কথা। নিজের দোকান থেকে অর্জিত আয় দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ জুগিয়ে পরিবারকেও টাকা পাঠান প্রতি মাসে। মোহাম্মদ আবরার ফাহাদ সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

ফাহাদ শুরুতে একাই কাজ করতেন তার জুসের দোকানে। তবে বর্তমানে সহযোগী হিসেবে রেখেছেন আরেক শিক্ষার্থীকে। ফাহাদের এমন ভিন্নধর্মী চিন্তা আর প্রশংসনীয় কাজকে বাহবা দিচ্ছেন সবাই। তার ক্যাম্পাসের সহপাঠী,বন্ধু,সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার এই উদ্যোগটা খুবই প্রশংসনীয়। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা বেকার বসে থেকে ডিপ্রেশনে চলে যায়। অনেক সময় তারা মাদক গ্রহণ করে, বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ফাহাদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা প্রশংসার দাবিদার। 

ফাহাদ বলেন, পরিবারকে একটু সচ্ছল রাখার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি আগে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। অনেক দিন চাকরি করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম আর অন্যের অধীনে চাকরি নয়, এবার নিজেকে কিছু করতে হবে। সেই চিন্তা থেকে নিজের কলেজ ক্যাম্পাসের শাকিল চত্বরে ফলের জুসের দোকান দিয়েছিলাম। শুরুতে কাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং হলেও দিন দিন ক্রেতাদের নিকট আমার তৈরি ফলের জুসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ আট (৮) মাসের এই পথচলাতে সবার থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

ফাহাদের জুস বারে পাওয়া যায় পেঁপে, তরমুজ, কমলা, মালটাসহ সব ধরণের ফলের জুস। মোট ত্রিশ পদের জুস পাওয়া যায় তার দোকানে। তার এই উদ্যোগে সাহস জুগিয়ে পাশে থেকেছেন নিজ কলেজ ক্যাম্পাসের সহপাঠী সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সবসময় ভিড় লেগেই থাকে ফাহাদের দোকানে। মজার বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি আইটেমে ১০ টাকা করে কম রাখেন ফাহাদ।

তিনি বলেন, আমার ফলের জুসের দোকান নিয়ে কে কী ভাবছে তা আমার দেখার প্রয়োজন নেই। আমি একটি জুসের দোকান করে প্রতিদিন আয় করছি। এটা আমার কাছে অনেক পাওয়া। কেউ যদি আমার কাজকে হেয় ভাবে দেখে এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনা। আমি কাজ করে খাচ্ছি, চুরি তো করছি না। আমার কাছে এটা ভালো লাগা, ভালোবাসার। ভবিষ্যতে আমার একটি রেস্টুরেন্ট দেওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে। 

ফাহাদ বলেন, বাবা-মায়ের ওপর চাপ না বাড়িয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর উচিৎ কিছু না কিছু শুরু করা। কেউ যদি ইচ্ছা করে আমি নিজে থেকে কিছু করবো তাহলে অবশ্যই সম্ভব। আল্লাহ চাইলে আমিও কিছু করতে পারবো এমন বিশ্বাস রেখে তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে।

ইত্তেফাক/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন