শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আসন্ন ঈদে নিশ্চিত হোক নিরাপদ সড়ক

আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১১

বছর ঘুরে আবারও দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ নাড়ির টানে নিজের শিখরে যায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করতে। এই যে সাধারণ মানুষ বিশাল আকারের ঝামেলা পার করে নিজেদের গ্রামগঞ্জে ঈদ পালন করতে যাবে, এর অনুভূতি তাদের জন্য রাজ্য জয় করে বাড়ি ফেরা। এই ফেরার অনুভূতি তাদের কাছে হাজারো আনন্দের ঊর্ধ্বে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করতে সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট যানবাহনে চলাচলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া-আসা করবে। নিরাপদ সড়কব্যবস্থা সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। আধুনিক সড়কব্যবস্থায় যানবাহন হতে হবে ফিটসম্পন্ন। কিন্তু আমাদের দেশের যানবাহনগুলোর অবস্থা খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। বেশির ভাগ গাড়িই লক্কড়ঝক্কড়, সিটগুলোর বেহাল অবস্থা, রয়েছে ইঞ্জিনজনিত নানা সমস্যা। তার  সঙ্গে রয়েছে লাইসেন্সযুক্ত অভিজ্ঞ একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকের অভাব। এসব প্রশ্নের সমাধান হচ্ছে না। রাজধানীসহ সারা দেশেই চলছে ত্রুটিপূর্ণ যান, লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। তার পরও সাধারণ মানুষ তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ পালনের কথা মাথায় রেখে এসব গাড়ি ব্যবহারে ভ্রুক্ষেপ করে না।

তাছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শুধু লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি, ত্রুটিপূর্ণ যান নয়, অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় যে, গাড়ির চালকেরই লাইসেন্স থাকে না। যার দরুন লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালক অবাধে যানবাহন চলাচলে বিচরণ করছে সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে। এইসব লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালকের হাতে আদৌ কি যাত্রীরা নিরাপদ? তারা কি যাত্রীদের নির্বিঘ্নে অক্ষত অবস্থায় লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দিতে পারে?  অবশ্যই নয়। ফলে সড়ক, মহাসড়কগুলোতে এসব অবৈধ চালকের কারণে সৃষ্টি হয় সড়ক দুর্ঘটনার। অকালে প্রাণ ঝরে যাত্রীর। এমনকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীও রেহাই পায় না তাদের দুর্ঘটনা থেকে। ফলে মহাসড়কগুলোতে দিনদিন বেড়েই চলেছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালকের সংখ্যা। এছাড়া সড়কপথগুলোতে বাধাবন্ধনহীনভাবে চলাচল করছে  ফিটনেসবিহীন গাড়ি।

 রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ ঢাকায় এবং বাকি ৭৪ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে হয়েছে। আর গত ঈদুল ফিতরে বাড়ি যাওয়া এবং কর্মস্থলে ফেরার সময় ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন নিহত হয়েছেন। যেটা মোট নিহত মানুষের ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরূপ অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলার  কারণে  ঈদের সময়  সড়কপথে দুর্ঘটনা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়। ফলে কোনো পথচারী অকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাচ্ছে নতুবা কাউকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। ফলে পরিবার হারাচ্ছে কারো সন্তান, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন কিংবা উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। এখন সময় এসেছে সড়কপথে অনতিক্রম্যে যথাসম্ভব এসব অনিয়ম দূর করার। এজন্য আধুনিক মানসম্পন্ন নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে, যেন ঈদের সময় মহাসড়কে কোনো প্রকার লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করতে না পারে। প্রয়োজনে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে এবং এসব লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালককে অতিদ্রুত লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন হতে হবে। মোটরসাইকেল আরোহীকে হেলমেট পরতে হবে। সড়কপথের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। তাহলে নিয়মনীতি-শৃঙ্খলার গতিপথ  তৈরির মাধ্যমে কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে সড়কপথে দুর্ঘটনা। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে ঈদসহ সব সময়। তাতে সাধারণ মানুষের ঈদ-আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, এই ঈদের ছুটির সময় ঝুঁকিপ্রবণ রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশের টহল বাড়াতে হবে। কোনো রাস্তা খানাখন্দকে পূর্ণ থাকলে দ্রুত তা মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে অ্যাম্বুলেন্সসেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তা থেকে অপসারণ করতে হবে। আশা করি, এবারের ঈদযাত্রা সবার জন্য নিরাপদ ও শুভ হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন