শ্রমিকদের মেহনতের ওপর দিয়েই তৈরি হয় উঁচু উঁচু ইমারত। অর্থনীতির চাকা তরতর করে ঘোরে তাদের ঘামে ভেজা শ্রমের ফলে। দেশ এগিয়ে যায়, প্রযুক্তি হয় উন্নত। এগিয়ে যায় সভ্যতা। কিন্তু যাদের শ্রমেঘামে এই উন্নতি, দিন শেষে তারাই থাকেন অবহেলিত, বঞ্চিত। আমাদের অর্থনীতিতে যে দুটি সেক্টর বেশি অবদান রাখে, সে দুটি হলো পোশাকশিল্প ও রেমিট্যান্স। কিন্তু অর্থনীতিতে অবদান রেখেও তারা কম অবহেলার শিকার নয়! অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘গার্মেন্টেসে কাজ নিলে বোঝা যায়, পৃথিবী কতটা কঠিন!’
মনে রাখা জরুরি, পোশাকশিল্প খাতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের। কিন্তু যাদের শ্রমের ফলে আজকের এ সাফল্য, তাদের প্রতি অবহেলা, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া কখনো কাম্য নয়।
এসডিজি অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহের মধ্যে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কি সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারছি? উন্নয়নের জন্য যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, তারাই যদি ভালোভাবে জীবনযাপন করতে সমর্থ না হন, তাহলে সে উন্নয়ন কতটা টেকসই হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। আজ নারীরা কর্মক্ষেত্রে যৌননির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন অনেক শ্রমিক। ঈদে কিংবা উৎসবে অনেককে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা শ্রম দিয়ে দেশে রেমিট্যান্স নামক সোনার হরিণ পাঠান, দিন শেষে তাদেরই পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা যদি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সম্মান করতে ভুলে যাই, একদিন তারাও আমাদের ভুলে যাবেন। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাক—এটাই সবার চাওয়া। এই অর্থনীতি এগিয়ে নিতে যারা দিনরাত মেহনত করে যাচ্ছেন তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাদের সম্মান করতে হবে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য কর্মপরিবেশ সুন্দর ও নিরাপদ করতে হবে। এসডিজির অভীষ্ট অর্জনে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের সব ধরনের কাজকে সম্মান করতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গিতে আনতে হবে পরিবর্তন। দেখা যায়, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে যখন একজন যুবক সরকারি চাকরি না পেয়ে, নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে যান, কিংবা কোনো কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন, তখন অনেকেই তাকে নিয়ে কটু মন্তব্য করে বসেন। তারা ভুলে যান, হালাল কাজ করে খাওয়াটাই সম্মানের, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়