সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

৩৩ বছর পর ম্যারাডোনার নাপোলির লিগ জয়

আপডেট : ০৬ মে ২০২৩, ১৭:০৬

উদিনেসের মাঠ থেকে তখনো ক্লাবে ফিরে আসেননি এসএসসি নাপোলির ফুটবলাররা। তার আগেই ইতালির নেপলস শহর উৎসবের নগরীতে পরিণত। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর লিগ শিরোপা জয় বলে কথা। প্রিয় দলের লিগ শিরোপা জয় উদযাপনে নেপলসের মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে অলি-গলি, ভিড়-ভাট্টা দেখে মনে হচ্ছিল নেপলস শহরের সব মানুষই যেন বাসাবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছে! কারো হাতে ক্লাবের পতাকা, কারো হাতে ক্লাবের প্রয়াত কিংবদন্তি ম্যারাডোনার ছবি-প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান ‘নাপোলি, নাপোলি, চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ আর মুহুর্মুহু আতশবাজির শব্দে নেপলস শহর যেন উল্লাস-উচ্ছ্বাসে কেঁপে কেঁপে উঠছিল।

ছবি: সংগৃহীত

শিরোপা জয়ী ফুটবলার, কোচ এবং উদিনিসের মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থকরা ফিরলে সেই উৎসবের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত চলা সেই উৎসবে শহর-কর্তাদের নমনীয়তায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন-ভঙ্গের অনুমতিও পেয়েছেন নাপোলির সমর্থকরা! নাপোলি সমর্থকদের শিরোপা উদযাপন উৎসবে খামতি ছিল একটাই-চ্যাম্পিয়নের স্মারক ট্রফিটাই শুধু ছিল না। ট্রফি থাকলে উৎসবের রংটা যে কেমন হতো!

ছবি: সংগৃহীত

রাতের আঁধার ফুড়ে নাপোলির সমর্থক তথা নেপলসবাসীর রঙিন উৎসবে একাকার হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিকই। নাপোলি ইতালিয়ান সিরি আ’র সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল সেই ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে। দীর্ঘ ৩৩ বছর আগে, আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে। এরপর বিশ্ব এবং বিশ্ব ফুটবলের অনেক কিছুই বদলে গেছে। বদলে গেছে সময়ও। স্বয়ং ম্যারাডোনাও ইহজগৎ ছেড়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন আড়াই বছর আগে। কিন্তু নাপোলি কিছুতেই লিগ জিততে পারছিল না। অবশেষে নাপোলির সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তা ও নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ভিক্টর ওসিমেনের হাত ধরে।

ছবি: সংগৃহীত

পরশু রাতে উদিনেসের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে ৫ ম্যাচ বাকি থাকতেই লিগ শিরোপা জয় নিশ্চিত করেছে নাপোলি। উদিনেসের মাঠে গিয়ে নাপোলি প্রথমে পিছিয়েই পড়েছিল। ম্যাচের ১৩ মিনিটেই স্বাগতিক উদিনেসেকে এগিয়ে দেন লভরিচ। নাপোলির সমর্থকদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ড্র করলেই শিরোপা জয় নিশ্চিত, তাই উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েই উদিনেসের মাঠে গিয়েছিল নাপোলির সমর্থকরা। কিন্তু দল প্রথমেই পিছিয়ে পড়ায় নাপোলির সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সেই হতাশা আরো গাঢ় হতে থাকে।

কারণ, ৫২ মিনিট পর্যন্তও লিডটা ধরে রেখেছিল উদিনেসে। অবশেষে হতাশা দূর করে নাপোলি সমর্থকদের বাধভাঙা উল্লাসে নাচিয়ে তোলেন ভিক্টর ওসিমেন। দারুণ এক গোল করে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। শেষ পর্যন্ত সেই ১-১ ব্যবধানেই ইতি ঘটে ম্যাচের। ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উদিনেসের মাঠে, উদিনেসের খেলোয়াড়, কোচ, সমর্থকদের সাক্ষী রেখে দীর্ঘ প্রতীক্ষার শিরোপা উদযাপনে মেতে উঠেন ওসিমেন, লরেঞ্জো, অলিভিয়েরেরা। এরপর উৎসব করতে করতেই নেপলসে ফেরেন তারা। নেপলসে ফিরে যোগ দেন রাস্তায় নেমে উৎসবরত শহরবাসীর সঙ্গে। নাপোলির শিরোপা উদযাপন উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছিল আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনার ছবি-প্ল্যাকার্ড।

ছবি: সংগৃহীত

নাপোলি এর আগে যে দুই বার লিগ জিতেছিল, দুই বারই ম্যারাডোনার হাত ধরে। ম্যারাডোনাই অখ্যাত নাপোলিকে বিশ্ব জুড়ে বানিয়েছিলেন বিখ্যাত। প্রতিদানে নেপলসবাসীও কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে চিরকালের জন্য হূদয়ে স্থান দিয়েছে। ক্লাবের দীর্ঘ অপেক্ষার শিরোপা উদযাপনেও তাই ভালোবাসার ম্যারাডোনাকে ভুলে থাকতে পারেনি। উৎসব করেছে ম্যারাডোনার ছবি ও স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে। পরশুর ড্রয়ে ৩৩ ম্যাচে ৮০ পয়েন্ট হয়েছে নাপোলির। সমান ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাজিওর পয়েন্ট ৬৪। মানে নাপোলি যদি বাকি ৫ ম্যাচেই হারে এবং লাজিও যদি ৫ ম্যাচেই জেতে, তাহলেও লাজিওর পয়েন্ট নাপোলির সমান হবে না।

নিশ্চিতভাবেই নাপোলির এই শিরোপা জয়ের বড় নায়ক কোচ স্পালেত্তা ও ফরোয়ার্ড ওসিমেন। ২০২১ সালে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্পালেত্তা নাপোলিকে খোলনচে পালটে দিয়েছেন। এই মৌসুমে স্পালেত্তার নাপোলি যে লিগে অপ্রতিরোধ্য রূপে ধরা দিয়েছে, ৫ ম্যাচ বাকি থাকতে শিরোপা জয়েই সেটা স্পষ্ট। তবে কোচের চেয়ে ওসিমেনের অবদানও কম নয়। দলকে শিরোপা জেতাতে এবারের সিরি আ’তেই সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন ওসিমেন। লিগে এরই মধ্যে ২২ গোল করেছেন তিনি। মৌসুম জুড়েই দুর্দান্ত খেলা ওসিমেনের বড় তৃপ্তি, শিরোপা নিশ্চিত করা গোলটিও এসেছে তার পা ছুঁয়েই।

ইত্তেফাক/এসএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন