ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত সপ্তাহে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় প্রায় ২৩ হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যটিতে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ইম্ফাল ও চুরাচান্দপুরের হাসপাতালের মর্গের তথ্যের ভিত্তিতে অন্তত ৫৪ জনের প্রাণহানির খবর প্রকাশ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে মণিপুর সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদিপ সিং জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ২০ জনের প্রাণহানির তথ্য আছে তাদের কাছে৷ সাম্প্রতিক জাতিগত সহিংসতার ঘটনায় তারা নিহত হয়েছেন কীনা তা খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।
তবে প্রায় ১০০ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ও পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। রোববার (৭ মে) সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আগের রাতে বড় ধরনের সহিংসতার কোন ঘটনা ঘটেনি।
চুরাচান্দপুরে স্থানীয় সময় সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আকাশ থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
বিবৃতিতে বাহিনীটি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট ২৩ হাজার বেসামরিক নাগরিককে উদ্ধার করে সামরিক ঘাঁটিতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদিকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে কারফিউ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং৷ মণিপুরে মেইতেইরা মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশেরও বেশি।
নাগা ও কুকিরা ৪০ শতাংশের মতো। কিন্তু একদিন মেইতেইদের আদিবাসী বলে মানা হতো না। কিন্তু এবার হাইকোর্ট তাদের সেই তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দিল। ফলে এতদিন মেইতেইরা 'নোটিফায়েড' পাহাড়ি এলাকায় জমি কিনতে পারতো না। এবার তারা পারবে।
এই সিদ্ধান্তে অন্য আদিবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে নাগা ও কুকিরা গত সপ্তাহে প্রতিবাদ জানান, যা সহিংসতায় রূপ নেয়। এর আগে মণিপুরের বিজেপি সরকারও কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখে মেইতেইদের উপজাতির স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ করেছিল।
গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন। এই পরিস্থিতির জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছে কংগ্রেস। মণিপুরে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটিতে গত কয়েক যুগ ধরেই জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত চলছে। ১৯৫০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার মানুষ সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। রাজ্যটির পূর্বে মিয়ানমার ও পশ্চিমে বাংলাদেশ সীমান্ত।