শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অধরা পান্থুমাই ঝরনা দেখা

আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৯:২০

পহেলা সরকারি ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রায় মাস খানেক ধরে  পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে ভ্রমণে যাব। শেষমেশ মেয়ের পরীক্ষার শিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় সব ভেস্তে গেল। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু মন যেন খাঁচার বন্দী পাখির মতো অস্থির হয়ে উঠে। ব্যস্ত জীবনে দুদিনের ছুটি একসাথে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

কিন্তু এত অল্প সময়ে কী করে দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের বন্ধুদের নিয়ে ট্যুরের আয়োজন করি? অবশেষে মাথায় একটা আইডিয়া খেলে গেল, তখনই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম—১ মে ছুটি। ভ্রমণের স্থান হতে পরে সিলেটের বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই জলপ্রপাত। রাত ১২টা ২৫ মিনিটে স্ট্যাটাস দেওয়ার সাথে সাথেই বন্ধু জোবায়ের সাড়া দিল। তার সাথে চ্যাট করা অবস্থায়ই ট্র্যাকার রবিউল আহসান খান মনা সেও সহযোগিতার প্রস্তাব দিল। ব্যস আমাকে আর পায় কে!

পরের দিন সকাল এগারটার মধ্যে কয়েকজন জুটে গেল। জুবায়েরের ওপর দায়িত্ব পড়ল টিকেট ম্যানেজ করার। আর আমি দায়িত্ব এড়াতে চেয়েও পারলাম না, অগত্যা নির্বিঘ্ন ভ্রমণের জন্য সেই গোয়াইন ঘাট উপজেলার কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য সেলফোনের বাটন চাপলাম। চাপতে চাপতে একসময় ব্যাটে বলে মিলে ছক্কা। হুররে! পথের ঝামেলার জন্য রাত ২টায় সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা থেকে গাড়ি ছাড়ল। পৌঁছাল সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। বাস কাউন্টারে সাফসুতরো হতে হতেই গোয়াইন ঘাট উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আ. মতিন ভাই সিএনজি নিয়ে হাজির। সিএনজি ছুটল পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পান্থুমাই গ্রামের পথে। ঘণ্টাখানেক চলার পর ছোট্ট একটা বাজারে ব্রেক। নাস্তা পর্ব শেষে আবারও দে-ছুটের ছুটে চলা।

এবার ধীরে ধীরে চোখের সীমানায় মেঘালয় পাহাড় নিজেকে মেলে ধরল। আর পথের দৃশ্য সে তো কয়েক পৃষ্ঠা লিখলেও শেষ হওয়ার নয়। সারা পথ ফটো তুলতে তুলতে পান্থুমাই গ্রামে এসে পৌঁছাই। অধীর আগ্রহ নিয়ে গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসা করি পান্থুমাই ঝরনা কোন দিকে? ‘ওই তো একটু সামনে গেলেই পাবেন।’

তবে কিছুদূর আসতেই সতর্কবাণী লেখা সাইন বোর্ড পাই—সাবধান সামনে ভারত, জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। একি পান্থুমাই ঝরনা সে তো ভিন্ন দেশে! তাকিয়ে থাকলাম একবার মেঘালয় পাহাড়ের পান্থুমাই ঝরনার দিকে, আরেকবার সতর্কবাণী সাইনবোর্ডের দিকে। ওহ্! এত কাছে তুমি তবুও অধরা। পান্থুমাই ঝরনা ভারতে হলেও এর সৌন্দর্য কিন্তু পুরোটাই আমরা দেখতে পাই। ভারতীয়দের দেখতে হলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসতে হবে। যাক বাবা পান্থুমাই তোমাকে ছঁুতে না পারি, তোমার অসম্ভব সৌন্দর্য তো আমরা বাংলাদেশিরা দেখতে পাই। এখানেই আমাদের সার্থকতা।

পান্থুমাই গ্রামের চারপাশটা খুব চমত্কার প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা, যেন সৌন্দর্যের আধার। এখানে খুব সুন্দর একটি খেলার মাঠ রয়েছে। পাশেই বয়ে গেছে পাহাড় থেকে নেমে আসা পিয়াইন নদী। শুনেছি পান্থুমাই নাকি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। আমার কাছেও তেমনটি মনে হলো। যেন পুরো গ্রামটি ফটো হয়ে দৃক গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে। পান্থুমাই গ্রামটিকে অনেকে পাংথুমাই নামেও ডাকে। মেঘালয় পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে আছে আমাদের পান্থুমাই।  ঝরনার পানি পুরোটাই প্রবাহিত হয় বাংলাদেশে। পান্থুমাই জলপ্রপাত এদেশ থেকে বিছিন্ন বলেই হয়তো স্থানীয়রা ফাটা ছড়া ঝরনা নামে চেনে, বিদায় মেঘালয় পাহাড়ের কোলে জেগে থাকা পান্থুমাই গ্রাম। বিদায় ফাটা ছড়া (পান্থুমাই) ঝরনা। আবার আসব ফিরে।

ইত্তেফাক/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন