সামাজিক কাজে বাংলাদেশ-আমেরিকার মধ্যে অসামান্য অবদান রাখার জন্য আমেরিকার নিউইয়র্ক এশিয়ান-আমেরিকান হেরিটেজ মাস উদযাপন উপলক্ষে নিউইয়র্ক টাউন অব হেম্পস্টেড কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন প্রিসিলা। অলাভজনক হেল্প অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা ও ‘প্রিসিলা নিউইয়র্ক’-এর মাধ্যমে নিজ দেশের মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করা, তারুণ্যের সামাজিক উৎকর্ষতা বিকাশে অনলাইনে কাজ, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার-বিমুখ প্রতিভাবান তরুণদের গল্প সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ স্ট্রিমিংসহ নানা কাজে অবদান রয়েছে তার।
গত ১২ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় নিউইয়র্কের হেম্পস্টেড টাউন হলে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং এশিয়ান-আমেরিকান হেরিটেজ মাস উদযাপন শেষে এশিয়ার প্রতিটি দেশ থেকে একজনকে সমাজ পরিবর্তনে কাজ করা ও নিজ কমিউনিটির জন্য বিশেষ অবদান রাখায় তরুণদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন আমেরিকার নিউইয়র্ক টাউন অব হেম্পস্টেড কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ। এই সময় অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা ও আয়োজকবৃন্দ প্রিসিলার হাতে এই সসম্মান তুলে দেন।
আমেরিকার নিউইয়র্ক টাউন অব হেম্পস্টেড সম্মাননা প্রদান করার সময় প্রিসিলা সম্পর্কে জানান, প্রিসিলা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক একজন আমেরিকার-বাংলাদেশি। যিনি ‘প্রিসিলা নিউইয়র্ক, ইনক’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা।তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গরিবদের জন্য শীতবস্ত্র, খাবার, নারীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী, পুষ্টি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করার পাশাপাশি গ্রামীণ মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে মহিলাদের সেলাই মেশিনও প্রদান করে থাকেন। অনাথ শিশুদের খাবার, জামাকাপড় ও পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয় তার সংগঠনের মাধ্যমে।
এছাড়াও একজন তরুণ সমাজকর্মী ও ভিডিও নির্মাতা হিসেবে প্রিসিলা তার ইউটিউব ও ফেসবুকের অনুসারীদের সচেতন করতে ও অনুপ্রেরণা দিতে তার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে লাইভ স্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের গল্প তুলে ধরেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া তার প্লাটফর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেন। বর্তমানে ইউটিউব এবং ফেসবুক মিলে প্রায় ৬ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে তার।
এই বিশেষ সম্মাননা পাওয়ার পর ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিসিলা বলেন, ‘আসলে এই সম্মাননা পুরো কৃতিত্ব আমার ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের ৬ মিলিয়ন অনুসারীর। তারা আমাকে সমাজসেবার কাজে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন বলে আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে নিউইয়র্কে থেকেও দেশের মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সাপোর্টের কারণেই আমি সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমি চাই না কেউ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসায় কষ্ট পাক। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন মানুষের সেবায় কাজ করে যাব; ইনশাআল্লাহ।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই কন্যা মাত্র ৪ বছর বয়সে বাবা-মা’য়ের সাথে পাড়ি জমান নিউইয়র্কে। ছোটকালে নাচ, গান, মডেলিং এর সাথে যুক্ত থাকলেও ২০১৭ সালে এসব ছেড়ে সামাজিক কর্মকাণ্ড ও মানবসেবায় নিজেকে জড়িয়ে নেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মানবিক সব কাজকর্ম প্রশংসায় ভাসছে সবার। গত বছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল তার লেখা জীবন গল্পের অনুপ্রেরণামূলক বই ‘পথ চলার গল্প’। এটি তার প্রথম গ্রন্থ। প্রিসিলা পড়াশোনা করছেন নিউইয়র্ক হোফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও আইন বিষয়ে। বর্তমানে তিনি ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস, ইউএসএ-এর যুব উন্নয়ন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, এশিয়ান-আমেরিকান হেরিটেজ মাস উদযাপন উপলক্ষে নিউইয়র্ক টাউন অব হেম্পস্টেড প্রতি বছর নিজ দেশ ও আমেরিকার কমিউনিটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য এশিয়ার প্রতিটি দেশ থেকে একজনকে এই সম্মাননা প্রদান করে থাকে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এই বিশেষ সম্মাননার জন্য মনোনীত হন আমেরিকান-বাংলাদেশি ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা।