সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা

আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ০২:৪৫

২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি নির্বাচনি বৎসর। বর্তমানে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে বিরাজ করিতেছে নির্বাচনি আমেজ। ইহা ছাড়া নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে যে, আগামী মধ্য জুলাইয়ে স্থানীয় সরকারের অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন পরিষদসহ (ইউপি) সাত পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। শীঘ্রই ঘোষণা করা হইবে ইহার তপশিল। ইহার পর এই বৎসরের শেষে অথবা আগামী বৎসরের শুরুতে হইবে বহু কাঙ্ক্ষিত জাতীয় নির্বাচন। অর্থাৎ আগামী কয়েক মাস নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জস্বরূপ। কেননা জাতীয় বা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আসিলেই আমাদের দেশে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। নির্বাচনের পূর্বে, নির্বাচনের দিন এমনকি নির্বাচনোত্তর কয়েক দিন ধরিয়া কোনো কোনো এলাকায় পরিস্থিতি থাকে উত্তপ্ত। চলমান পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনও দিনদিন উত্তাপ ছড়াইতে শুরু করিয়াছে। ইতিমধ্যে বরিশাল মহানগরে ক্ষমতাসীন দলের কোন্দলে নৌকার কর্মীর উপর হামলা চালাইয়াছে খোদ সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের একশ্রেণির নেতাকর্মী। গাজীপুরে এক কাউন্সিলর প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে কিলঘুসি মারিয়া আহত করিয়াছে। তাই যে কোনো নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করিবার ব্যাপারে সর্বপ্রকার সতর্কতা অবলম্বন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

এই বার বিশেষত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া নিরাপত্তাগত ব্যাপক পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ আবশ্যক। এই বারের নির্বাচন আয়োজন নানা কারণেই অনেক অধিক চ্যালেঞ্জিং। প্রথমত, বিভিন্ন দল হইতে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিলে স্থানীয় পর্যায়ে রেষারেষি, মারামারি এমনকি খুনোখুনির মতো পরিস্থিতিও তৈরি হইতে পারে। ক্ষমতাসীন দল হইতে স্বতন্ত্র ব্যানারে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারেন। কৌশলগত কারণে একাধিক প্রার্থী দাঁড় করাইবার পরিকল্পনার কথাও অজানা নহে। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন দলে যেই সকল বহিরাগত ও অনুপ্রবেশকারী ঘাপটি মারিয়া বসিয়া রহিয়াছে, তাহারা সুযোগমতো নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া সমগ্র দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করিতে পারে। বিশেষ করিয়া যেই সকল রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও তাহাদের উত্তরসূরিরা সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে পদ-পদবি ক্রয় করিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে রহিয়াছে—তাহারা মরণকামড় দিতে পারে। ঘুষ-দুর্নীতি ও নানা কেলেঙ্কারির ঘটনায় ইতিমধ্যেই তাহাদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়া গিয়াছে। নির্বাচনের সময় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করিতে এবং সরকারকে বেকায়দায় ফালাইতে তাহাদের অপতত্পরতা বাড়িয়া যাইতে পারে। তৃতীয়ত, সরকারি দলের বাহিরেও অন্য দলগুলিতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি লক্ষ করা যাইতে পারে। ইহাতে অধিকসংখ্যক বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা কঠিন হইয়া উঠিলেও তাহাতে অবাক হইবার কিছু থাকিবে না। চতুর্থত, ইতিপূর্বে দেখা গিয়াছে, দলের শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করিয়া বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হইলেও দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তাহাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা অনুযায়ী তেমন কোনো পদক্ষেপ লওয়া হয় নাই। বরং জিতিয়া যাইবার পর তাহাদের দলে আবার স্বাগত জানানো হইয়াছে। পূর্বে যেহেতু অ্যাকশন নেওয়া হয় নাই, তাই এই বার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়িয়া যাইবার আশঙ্কাই অধিক। আর একটি দলে একাধিক প্রার্থী থাকিলে সেই দলের শৃঙ্খলা যেমন ভঙ্গ হয়, নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হইয়া পড়ে, তেমনি এই পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নাজুক করিয়া তুলিতে পারে। পঞ্চমত, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি না হওয়ার যেই প্রবণতা অধিক হারে দেখা যাইতেছে তাহাও বিপজ্জনক। এই কারণে অনেকে এখন হইতেই সুষ্ঠু নির্বাচন লইয়া শঙ্কা প্রকাশ করিতেছেন।

শুধু বাংলাদেশ নহে, এই উপমহাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির নির্বাচনি সংস্কৃতিতে সামান্য বিষয় লইয়া বাগিবতণ্ডা, পেশিশক্তির ব্যবহার ইত্যাদি লক্ষণীয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া কেহ কেহ ভোটারদের মন জয়ে কাজ না করিয়া স্থানীয় মাস্তান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তুষ্ট করিতে ব্যস্ত বলিয়াও জানা যায়। এই সকল কারণে সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগ দূর করিতে এখন হইতেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।‑

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন