মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

তেল নিয়ে ভারত-ইইউ দ্বন্দ্ব

আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ১৫:৩১

রাশিয়ার তেল কম দামে কিনে পরিশোধন করে তা ইউরোপে বিক্রি করছে ভারত। ইইউ এর এই অভিযোগের জবাব দিলো দিল্লি। বাংলাদেশ, সুইডেনের পর বেলজিয়াম পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। মঙ্গলবার (১৬ মে) ব্রাসেলসে বসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেলের অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন তিনি। 

বরেলের অভিযোগ ছিল, রাশিয়ার তেল কম দামে কিনে তা ঘুরিয়ে ইউরোপে বিক্রি করছে বেশ কিছু দেশ। ভারত তার অন্যতম। এদিন জয়শংকর পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে জানিয়েছেন, বরেলের ইউরোপীয় কাউন্সিলের রেগুলেশন আরেকবার পড়ে নেয়া উচিত।

রাশিয়ার তেল কম দামে কিনে পরিশোধন করে তা ইউরোপে বিক্রি করছে ভারত।

জয়শংকরের দাবি, রেগুলেশনের ৮৩৩/২০১৪ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কোনো দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনে পরিশোধন করে তা যদি আবার ইউরোপে বিক্রি করে, তাহলে সেই তেল রাশিয়ার বলে গণ্য হবে না। সুতরাং, ভারত আইন বহির্ভূত কোনো কাজ করছে না। 

এ বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১১তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ তৈরি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেখানেই এই তৃতীয় দেশের তেল বিক্রির প্রসঙ্গটি উঠেছে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল

এর আগের নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কেনার বিষয়ে একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। কিন্তু অভিযোগ, ভারত, সৌদি আরব ও চীনের মতো কিছু দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। তারা রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কম মূল্যে কিনছে। 

এরপর তা নিজেদের দেশে পরিশোধন করে ইউরোপে বিক্রি করছে। ফলে ঘুরপথে রাশিয়ার তেল ইউরোপে ঢুকছে। রাশিয়াও নিজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ১১তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে এই তৃতীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তারই ভিত্তিতে বরেল তার মন্তব্যটি করেছিলেন। 

 এদিন জয়শংকর পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে জানিয়েছেন, বরেলের ইউরোপীয় কাউন্সিলের রেগুলেশন আরেকবার পড়ে নেয়া উচিত।
মঙ্গলবার সেই মন্তব্যেরই পাল্টা জবাব দিয়েছেন জয়শংকর। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে অবশ্য গত প্রায় এক বছর ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ইউরোপীয় দেশগুলো। 

ইউরোপের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ইইউ ও আমেরিকা যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়েছে, ভারত তখনো রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে গেছে। কম দামে তেল কিনছে। কয়েকমাস আগে দিল্লিতে এসেছিলেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। 

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে অবশ্য গত প্রায় এক বছর ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ইউরোপীয় দেশগুলো। 

জয়শংকরের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে তার আলোচনা হয়েছিল। সেখানে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের বিষয়টিও উঠেছিল। বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জয়শংকর জানিয়েছিলেন, ভারত রাশিয়ার থেকে খুবই কম মূল্যের তেল কেনে। সব মিলিয়ে তা ১২-১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

এত নিষেধাজ্ঞার পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর চেয়ে অনেক বেশি মূল্যের গ্যাস ও তেল রাশিয়ার থেকে কিনছে। এ বিষয়ে একটি ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাশিয়া ফসিল ফুয়েল ট্র্যাকার নামক ওই ওয়েবসাইটে কোন দেশ রাশিয়ার থেকে কত মূল্যের তেল ও গ্যাস কিনছে, তা নথিভুক্ত করা আছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। 

কয়েকমাস আগে দিল্লিতে এসেছিলেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। 

এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাশিয়া ফসিল ফুয়েল ট্র্যাকারের হিসেব অনুযায়ী, এতো নিষেধাজ্ঞার পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার থেকে ৮৮ মিলিয়ন ইউরোর তেল, ৬২ মিলিয়ন ইউরোর গ্যাস এবং তিন মিলিয়ন ইউরোর কয়লা কিনছে। 

তেল গ্যাস ও কয়লা মিলিয়ে চীন কিনেছে প্রায় ৮১ মিলিয়ন ইউরোর প্রাকৃতিক সম্পদ। আর ভারত কয়লা আর তেল কিনেছে প্রায় ২৯ মিলিয়ন ইউরোর।  ব্রাসেলসে জয়শংকর জানিয়েছেন, যুদ্ধের পর রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বেড়েছে, এমন নয়। আগে যে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল, তাই বহাল আছে।

ইত্তেফাক/ডিএস