শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বৃক্ষনিধন মানবনিধনের নামান্তর

আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ০০:০৬

সৃষ্টিজগতের সেরা জীব যদি বলা হয় মানুষকে, তবে সৃষ্টিজগতের গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি বলা যায় বৃক্ষকে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে আজ অবধি পৃথিবীকে রক্ষার পাশাপাশি সুন্দর ও শোভন করে চলেছে বৃক্ষ। মানুষের বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। তাই তো বৃক্ষকে মানুষের পরম বন্ধু বলা হয়। গাছপালা আমাদের বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং আমাদের জন্য ক্ষতিকারক কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে পৃথিবীটাকে করে রেখেছে নির্মল, স্নিগ্ধ ও বাসযোগ্য। মানুষের বেঁচে থাকার যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা), তা-ও নিশ্চিত করে বৃক্ষ; যেমন—আমরা খাদ্যশস্য পাচ্ছি বৃক্ষ থেকে, বস্ত্রের মূল জোগানদাতাও বৃক্ষ, আমাদের আশ্রয়স্থল বলা যায় বৃক্ষকে, শিক্ষাসামগ্রী উৎপাদনেও আমরা বৃক্ষের কাছে ঋণী এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। দেখা যায়, যেখানে গাছপালা ও বনভূমি রয়েছে, সেখানে বৃষ্টিও বেশ ভালো হয়, যার ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং ভালো খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। তা ছাড়া বন্যা, খরা, জালোচ্ছ্বস, নদীভাঙন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করছে বৃক্ষ। উল্লেখ্য, বিগত সময়গুলোতে সিডর, আইলা, ফণি, আম্ফান ইত্যাদির মতো ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের প্রতিটি বৃক্ষ যেন পরম যত্নে আগলে রেখেছে এই ভূখণ্ডকে। 

কিন্তু গাছপালার মতো নিঃস্বার্থ বন্ধুর প্রতি মানবজাতির আচরণ যেন সম্পূর্ণই ভিন্ন, উপকারের বিপরীত শাস্তির এটাই যেন শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। যে বৃক্ষ আমাদের প্রাণ রক্ষা করে চলেছে, সেই বৃক্ষ নিধনে আমরা হয়ে উঠেছি তৎপর। যেখানে একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন, যেখানে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফরেস্ট-২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ মোট ভূখণ্ডের ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বৃক্ষনিধনের কারণে বনভূমির পরিমাণ দিনে দিনে কমেই চলেছে। যেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা বৃক্ষের ওপর নির্ভরশীন, সেখানে বৃক্ষ নিধন করতে গিয়ে আদতে আমরা নিজেদেরই নিধন করতে বসেছি। বৃক্ষনিধনের ফলাফল আমরা ইতিমধ্যে পেতে বসেছি। কারণ এর ফলে জলবায়ুতে পড়েছে বেশ প্রভাব। দেখা যায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ছিল, যার ফলে তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাছাড়া বৃক্ষনিধনের ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন—বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। 

বৃক্ষ নিয়ে একটি প্রচলিত উক্তি—‘যারা গাছ রাখতে পারবে না, তারা শিগিগর এমন একটি পৃথিবীতে বাস করবে, যা মানুষকে ধরে রাখতে পারবে না।’ উক্তিটি যেন নিতান্ত সত্য হয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে আজকের দিনে। তাই এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের অতি শিগিগর এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বেশি বেশি বৃক্ষ রোপণ করা, বৃক্ষমেলার আয়োজন করা, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ আরো নানা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হাতে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন, বন বিভাগ, সরকার ও জনগণ সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমরা প্রাণহীন মরুভূমি চাই না, চাই বাসযোগ্য সবুজ, শ্যামল পৃথিবী। 

লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন