শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

একেই বলে মধুর প্রতিশোধ

আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, ০০:১২

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার স্মারক আমাদের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্ন আর সাহসের প্রতীক পদ্মা সেতু। দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, দেশপ্রেমে বলিয়ান হয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হওয়ার গল্পের নাম পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সেতু নয়, তবে অবশ্যই সবচেয়ে আলোচিত সেতু। এই সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশ থেমে থাকেনি। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে পদ্মা সেতু করে ফেলা সম্ভব, এটা তেমনটি করে কেউ ভাবেননি। শুধু ভেবেছিলেন একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্ন দেখতেও আসলে সাহস লাগে, সামর্থ্য লাগে। শেখ হাসিনার সেই সাহস আছে আর তিনি সেই সাহসীযাত্রায় সঙ্গী করেছেন গোটা জাতিকে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিশ্বের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত করেছেন। নির্মাণ করেছেন কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থাকে বদলে দেয়নি, বদলে দিয়েছে অর্থনীতি। এ সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বেড়েছে। মানুষের আয়, কর্মসংস্থান বাড়ছে, দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। এ সেতুই হয়ে উঠছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের নতুন অর্থনৈতিক ভিত্তি।

অনেক অর্থনীতিবিদদের মতে, পদ্মা সেতু অচিরেই রাজধানী থেকে মাওয়া-জাজিরা-ভাঙ্গা-পায়রা-কুয়াকাটা-যশোর-খুলনা-মোংলা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের দরজা’ হিসেবে বিবেচিত হবে। যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন বাতিল করছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি সেই পদ্মা সেতুর ফ্রেমে বাধানো ছবি উপহার দেন।

শুনেছি ছবি কথা বলে। আজ দেখলাম একটি ছবি হাজারো সংশয় সন্দেহ মূলক সব প্রশ্নের উত্তর দেয়। একটি ছবি যেন,কিভাবে নীরবে সকল অপমানের সকল ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। এ যেন এক মধুর প্রতিশোধ।

ওয়াশিংটন ডিসিতে সেই অনুষ্ঠানে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন, 'আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা মাথা নিচু করতে শিখিনি।'

তিনি আরও বললেন, 'আমরা রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, দুর্নীতি করে নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসিনি, আমি এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে।' বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের কোনো নেতা বলতে পারে- 'আমার বাঙালি আমরা বিজয়ী জাতি, বীরের জাতি। আমরা মাথা নিচু করতে শিখিনি।'

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পরে বাংলাদেশের একমাত্র নেতা শেখ হাসিনাই বলতে পারেন- 'আমার বাঙালি আমরা বিজয়ী জাতি, কেউ আমাদের নত করবার চেষ্টা করলেও আমরা শীড়দাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াতে জানি।'

বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন মন্দা সৃষ্টি হয়েছিলো তখন মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ টুইন টাওয়ার বানানোর ঘোষণা দিয়েছিলো। বিশ্বের পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলো তখন তা অবাস্তব সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছিল। মাহাতির মোহাম্মদ সাড়ে তিন বছরে সেই টুইন টাওয়ার তৈরি করেছিলেন। আমরাও এমন একজন মাহাতির পেয়েছি। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা, যিনি একইভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিচ্ছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আজ বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। কোনো দেশ দেউলিয়া হয়েছে, আবার অনেক দেশ দেউলিয়ার পথে। বিশ্ব করোনা মহামারির মধ্যে যখন সব দেশের অর্থনীতির অবস্থা নড়বড়ে, তখন এই যুদ্ধটা মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে। মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিষ্ময়কর।  শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ভূমিহীনদের গৃহায়ণ, পদ্মা সেতু, হাতিরঝিল, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলি ট্যানেল, মেট্রোরেলসহ অনক মেগা প্রকল্প সারাদেশেই এখন দৃশ্যমান।

পৃথিবীর সব জাতির কিছু না কিছু ধূসর সময় থাকে, থাকে স্বর্ণ সময়। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বর্ণযুগ পার করছে।বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার, মানে পাচঁ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। অর্জনটা যত বড় আওয়াজটা তত বড় নয়। এটাকে বলে অর্জনের ক্লান্তি। একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেটে কেনিয়াকে হারালেও মধ্যেরাতে আমরা মিছিল বের করতাম, এখন অস্ট্রেলিয়াকে হারালেও ফেইসবুকে অভিনন্দন জানিয়ে ঘুমিয়ে যাই।
বাংলাদেশের মানুষ আওয়াজ না তুললেও বিশ্ববাসী বাংলাদেশ উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, জার্মানি সংসদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংসদীয় দলের প্রধান ও সাবেক জার্মান মন্ত্রী রেনাটে ক্যুনাস্টকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সাংসদ রেনাটে ক্যুনাস্ট তার বক্তবে বলেন, 'আমি দুইবার বাংলাদেশে গিয়াছি। প্রথমবার গিয়াছি রানা প্লাজার ঘটনার পর। দ্বিতীয়বার গিয়েছি কয়েক সপ্তাহ আগে। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে মাত্র ১০ বৎসরে কীভাবে একটি দেশে এত পরিবর্তন হয়েছে, এত উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশর উন্নয়ন দেখে আমি চমকে গিয়েছি।' তিনি আইন ও শৃঙ্খলার কথাও বলেন।

রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে প্রশংসিত হচ্ছে। জার্মানির পরিবেশবাদী সবুজ দলের নেত্রী রেনাটে ক্যুনাস্ট'র সঙ্গে আমার দেখা ৩৪ বছর পর। ১৯৮৮ সালে বার্লিনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিল, তখন রেনাটে ক্যুনাস্ট বাংলাদেশিদের পাশে দাঁডিয়েছিলেন। আর তার কারণেই আমরা ১৩০ জন বাংলাদেশি জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেয়েছিলাম। রেনাটে ক্যুনাস্টকে ১৯৮৮ সালে আমাদের জার্মানিতে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই । আমি তাকে বলি, আমরা জার্মানিতে এখন অনেকই ভালো প্রতিষ্ঠিত। অনেকের ছেলে মেয়ে ডাক্তার-ইজ্ঞিনিয়ার পড়াশুনা করছে। তিনি শুনে খুব খুশি হন এবং বলেন 'আমারা তো তাহলে তোমাদের থাকতে দিয়ে ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।'

তিনি আরও বলেন, আপনার কি মনে আছে বার্লিনের সংসদে দাঁড়িয়ে ১৯৮৮ সালে আপনি বলেছিলেন- 'বাংলাদেশ কোন আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, বন্যার কারণে বিমান অবতারণ করতে পারছে না। আমরা মানবিক কারণে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে পারি না। ১৩০ জন বাংলাদেশিদের জার্মানিতে থাকার অনুমতি দিতে হবে।' আপনাদের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে সেদিন আমরা জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেয়েছিলাম।

এখন জার্মানি থেকে প্রতিমাসে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে আর বলা হচ্ছে বাংলাদেশে এখন নির্বাচিত সরকার। বাংলাদেশিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে জীবনের কোন ঝুঁকি নেই। স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রের যে উত্তরণ, এর নায়ক হচ্ছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন আর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন উন্নত বিশ্বের তালিকায় নাম লেখানোর স্বপ্নময় পথ অতিক্রম করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নের গণ্ডি ছড়িয়ে বিশ্বের বিস্ময় 'স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বীর বাঙালির প্রিয় বাংলাদেশ। তিনি ইতিহাসের পাতায় লিখছেন বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা নতুন ইতিহাস।

সভাপতি, জার্মান আওয়ামী লীগ

ইত্তেফাক/এসকে/এমএএম