মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বাগান থেকে চুরি হচ্ছে ছায়াবৃক্ষ, চা উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, ১৩:১৬

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টিলাভূমিতে বিভিন্ন চা-বাগান থাকা শেডট্রি বা ছায়াদানকারী বৃক্ষ অতিবৃষ্টি ও প্রখর রোদের কবল থেকে চা-গাছকে রক্ষা করে। এটি মাটির ক্ষয়রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে অনেক দিন থেকে একটি মহল চা-বাগানের সেকশন থেকে রাতের আঁধারে গাছ কেটে পাচার করছে।

পুলিশের কাছে বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ থাকলেও তা রোধ হচ্ছে না। এতে চায়ের উত্পাদনেও প্রভাব পড়ছে। আবার পরিবেশ ও শিল্পের জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার শমশেরনগরের ফাঁড়ি দেওছড়া, ডবলছড়া, কানিহাটি, আলীনগর চা-বাগান, কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চা-বাগানসহ বিভিন্ন চা-বাগানে পুরোনো ও বৃহদাকার ছায়াবৃক্ষগুলো রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে। কড়ই, আকাশিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালিতে টিলাভূমি পরিপূর্ণ টিলাটক্কর এখন বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। একটি সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত বাগানের গাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আর সেগুলো বাগানের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স’মিলে নিয়ে চিরানো হয়। এতে পর্যায়ক্রমে বৃক্ষশূন্য হচ্ছে চায়ের টিলা। প্রভাব পড়ছে চা উৎপাদনে।

সর্বশেষ বুধবার (১৭ মে) দিবাগত রাতেও দেওছড়া চা-বাগানের ১৫নম্বর সেকশন থেকে গাছ চুরির অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরা। চোরদল গাছ কেটে খণ্ডাংশ করে নিয়ে গেছে। শুধু ছায়াবৃক্ষই নয়, চা-বাগানের টিলা থেকে প্রতি রাতেই ট্রাকবোঝাই কাঁচা চা-পাতাও চুরি হচ্ছে। এতে শিল্পের বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনছে।

চা-শ্রমিকদের অভিযোগে জানা যায়, গাছচোর চক্র অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে চায়ের টিলাভূমিতে প্রবেশ করে হরদম গাছ চুরি করে নিয়ে যায়। বাগানের মূল্যবান ও পুরোনো ছায়াবৃক্ষ আকাশি ও রেন্ট্রি প্রজাতির গাছগুলো কেটে খণ্ডাংশ করে স’মিলসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। পঞ্চায়েত নেতারা জানান, বাগান থেকে গাছগাছালি ও কাঁচা চা-পাতা চুরি হচ্ছে। গাছ চুরি হয়ে যাওয়ায় টিলাগুলো বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়ছে। এজন্য চা গাছেও ছায়া থাকবে না। ফলে বাগানের ও শ্রমিকদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা ম্যানেজমেন্টকেও বলেছি।

বাগানের ছায়াবৃক্ষগুলোতে চায়ের উৎপাদন, মাটির ক্ষয়রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।

শমশেরনগর কানিহাটি চা-বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, দেওছড়া, শমশেরনগর, কানিহাটি, বাঘিছড়া বাগান থেকে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যবান গাছগাছালি ও কাঁচা চা-পাতা চুরি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে চা-শ্রমিক ও উৎপাদনে। গাছ কমে যাওয়ায় পরিবেশও হুমকির মুখে পড়েছে।

শমশেরনগর চা-বাগানের ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, চা-বাগান থেকে দীর্ঘ সময় ধরেই গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরি বিষয়ে থানার পুলিশকে হচ্ছে। বাগানে চকিদার ও পঞ্চায়েত নেতাদের নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার পরও গাছ চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

শমশেরনগর ফাঁড়ির ইনচার্জ শামীম আকনজি বলেন, চা-বাগান থেকে গাছ চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুত্বসহকারে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

ইত্তেফাক/আরএজে