এক সময় যে পুকুরে গোসল, ধোয়ামোছা চলতো এখন সে পুকুর মৃতপ্রায়। চারপাশে ভবনের পর ভবন। পুকুরের ভেতরে এমনভাবে দোকান ও মার্কেট করা হয়েছে যে দোকানের পেছনে যে পুকুর রয়েছে সেটি সড়ক থেকে বোঝাই যাচ্ছে না। দিনের বেলা মার্কেট নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকলেও এখনো রাতের বেলা দোকান তুলে পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানীর গেন্ডারিয়ার ডিআইটির শতবর্ষের এই পুকুরটি দখলের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, যারা দখল করছে তারা মামলার পর মামলা করায় আমরা পেরে উঠছি না। জনস্বার্থে পুকুরটি রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
রাজউক ১৯৬৩ সালে গেন্ডারিয়ায় ১৩ দশমিক ৫৭ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। এর মধ্যে দুই একরের একটি পুকুরও ছিল। পুকুরটির বয়স বর্তমানে প্রায় ১০০ বছর। সেই পুকুরটিই ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে এখন ভরাট করার প্রতিযোগিতা চলছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গেন্ডারিয়া পুকুরের চারপাশে মার্কেট, দোকান ও বেশ কয়েকটি রিকশার গ্যারেজ। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান সবই সেখানে রয়েছে। এ ছাড়াও পুকুর দখল নিশ্চিত করতে মার্কেটের একাংশে দোতলা ভবনে নিজের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সাহানা আক্তার।
এলাকাবাসী জানায়, এখানে বেশির ভাগ দোকানের ভাড়া তোলেন বর্তমান কাউন্সিলরের বাবা শহিদুল ইসলাম।
রাজউকের সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুকুরটি রাজউকেরই। এটি দখলে নেওয়ার জন্য প্রভাবশালীরা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে একটি মামলা করে। সে মামলা বহু বছর ধরে চলছিল। এরই মধ্যে বেশির ভাগই দখল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম বলেন, যারা দখল করছে তারা মামলার পর মামলা করায় আমরা পেরে উঠছি না। সর্বশেষ আমরা রিভিউ পিটিশনে হেরে গিয়েছি। আমরা চাই পুকুরটি রক্ষায় রাজউকের বাইরেও কেউ কথা বলুক। জনস্বার্থে পুকুরটি রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকায় পুকুর ছিল ১০০টি। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯টিতে। পাঁচ বছরে ঢাকায় পুকুর কমেছে ৭১টি।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৪ সালেও রাজউকের পুকুরে গোসল করেছেন তারা। এরপর থেকেই মূলত পুকুরটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে। স্থানীয়দের ব্যবহারের সুযোগ কমতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দখলের শুরুতে পুকুরটিতে প্রচুর আবর্জনা ফেলা হয়। গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সব ধরনের বর্জ্যে পুকুরটি ভরে ওঠে। তারপর স্থানীয় প্রভাবশালীরা পুকুরপাড়ে টং দোকান ও রিকশার গ্যারেজ নির্মাণ করে। তখন পুকুরটির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহানা আক্তার বলেন, রাজউক জায়গাটি অধিগ্রহণ করেছে কিন্তু এখন এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। সরকারি নয়। উচ্চ আদালত থেকে জাকির হোসেন এ রায় পেয়েছেন। আমি তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন।
রাজউকের মালিকানার পুকুরের মালিকানা কীভাবে দাবি করছেন জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, পুকুরটি রাজউক অধিগ্রহণ করে। কিন্তু আমরা এটি আদালতে রিট করে পাই। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। রাজউক আপিল করে। সেখানেও রায় আমাদের পক্ষে আসে। এরপর আবার রাজউক রিভিউ করে। সে রায়ও আমাদের পক্ষে আসে। তাই আমরা এখন পুকুরটির মালিকানা দাবি করছি।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পুকুর সরকারি হোক বা বেসরকারি, জলাধার আইন অনুযায়ী কেউই তা দখল করতে পারে না। আর আইনে হেরে গেলেও রাজউক চাইলে অবৈধ এই দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
ইত্তেফাক/আরএজে