শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উন্নত দেশ গঠনে মাদকমুক্ত সমাজ চাই

আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ০৫:১৩

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি তরুণ রয়েছে। এই তরুণেরাই আমাদের অহংকার। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে যে জায়গা করে নিয়েছে, উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে তরুণদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নেরও রোল মডেল হবে। ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বে পরিণত হবে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট  বাংলাদেশ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ মাদকমুক্ত স্মার্ট তরুণ ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ মাদকাসক্ত তরুণেরা কখনো স্মার্ট চিন্তা করতে পারবে না।

বর্তমানে দেশে মাদকাসক্ত তরুণদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। জাতির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে মাদকাসক্ত তরুণেরা। সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ-যুব জনগোষ্ঠী ধরা হয়। আর মাদকাসক্ত ৮০ শতাংশ হচ্ছে তরুণ। একটি তথ্যমতে, মাদকসেবীর সংখ্যা এখন দেশে প্রায় ২ কোটি। এর মধ্যে দেড় কোটি নিয়মিত। ৫০ লাখের মতো অনিয়মিত। দেশে সেবনকারীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে। পাঁচ সংস্থার ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮২টি মামলায় ১০ লাখ ১০ হাজার আসামি। বিগত এক যুগে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদক উদ্ধার হয়েছে। বছরের হিসাবে মাদকের পেছনে খরচ হয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই ব্যবসায় জড়িত ২০০ গডফাদার এবং বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করে ১ লাখ ৬৫ হাজার জন। এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া ২৫ ধরনের উল্লেখযোগ্য মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, গাজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার, ইনজেকটিং ড্রাগ, এলএসডিও আইস। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন,  মাদকদ্রব্য উদ্ধারের চিত্র দেখলেই বিস্তারের একটা ধারণা পাওয়া যায়। যেগুলো উদ্ধার হচ্ছে, সেগুলো তো কেবল যা তাদের চোখে পড়ছে। সব তো আর চোখে পড়ছে না। যেটা ধরা পড়ে, সেটা খুবই সামান্য। বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যে মাদকের বিস্তার জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিদিনই বাজারে চাহিদা বাড়ছে। মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণে তরুণদের চিন্তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তরুণেরা প্রগতিশীল হতে পারছে না। তারা পরিবার ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে পড়ছে। 

মাদকে আসক্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, সামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেয়েমি, একাকিত্ব এবং পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তনের পরিবেশে ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই করতে অক্ষমতা। তবে মাদকের সহজলভ্যতা মাদকাসক্তের হার বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক উন্নয়ন এবং ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদিও মাদকের সমস্যার জন্য দায়ী। পারিবারিক কলহ, ডিভোর্সের কারণে ভেঙে যাওয়া পরিবার, প্রেম ও চাকরিতে ব্যর্থতা থেকে হতাশার কারণেও মাদকাসক্তের হার বাড়ছে।  বিশেষ করে স্কুল- কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাদকে আসক্ত হওয়ার পেছনে পরিবারের অবহেলাকে দায়ী করা হয়।

কেউ একা একা মাদকাসক্ত হতে পারে না। তার আচার-আচরণ খেয়াল করতে হবে। একজন মাদকাসক্ত সন্তান কখনো স্বাভাবিক আচার-আচরণ করতে পারে না। তাদের ছোট ছোট অসংগতিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাদের কোনো দাবি থাকলে তা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। সমাজে যখন নৈরাজ্য দেখা দেয়, তখন মাদকাসক্তের সংখ্যা ব্যাপক বাড়ে। মাদকের বিচারে দীর্ঘসূত্রতাও উল্লেখযোগ্য কারণ। তাই যে কোনো মূল্যে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সর্বোশক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কোনো রাষ্ট্রীয় সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদের মতো মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। মাদক নির্মূলে গডফাদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মাদকের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। মাদকের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন